কম্পিউটার অথবা, কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন - রচনা
কম্পিউটার অথবা,
কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন
ভূমিকা: কম্পিউটার আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। মানুষের সকল চাওয়াকে পাওয়াকে পরিণত করছে কম্পিউটার। কম্পিউটার মানুষের চিন্তা ও চেতনার বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। মানুষ মস্তিষ্ক দিয়ে যে জটিল সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারছে না, কম্পিউটার তার সমাধান দিচ্ছে অতি দ্রুত। আজকের দিনে কম্পিউটার নানা বৈচিত্র্যে এবং বহুমুখী পথ ধরে এগিয়ে চলছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে।
কম্পিউটার: গ্রিক শব্দ 'Compute'থেকেই 'Computer' শব্দের উৎপত্তি; যার আভিধানিক অর্থ গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন কম্পিউটারকে কেবল গণনাকরী বলা চলে না। কম্পিউটার বলতে এমন একটি যন্ত্রকে বোঝায়, যা অগণিত উপাত্ত বা তথ্য গ্রহণ করে অত্যন্ত দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ, গণনা বিশ্লেষণ ইত্যাদি করাসহ সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করতে পারে। টাইপ রাইটার. লইন প্রিন্টার , কার্ড রিডার, কার্ড পাঞ্চিং, ট্রানজিস্টর, সার্কিট প্রভৃতি সর্বাধিক গণণামূলক ব্যবস্থাই হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটাররের আবিষ্কার ও বিবর্তণ: কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি নতুন আবিষ্কার হলেও এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। বহুকাল ধরে বহুজনের অবদানের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে কম্পিউটার। ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবজের হাতে সালে পাঁচটি অংশে সর্ম্পূণ আধূনিক কম্পিউটার গঠনতত্ত্ব আবিষ্কার করেন। ব্যাবেজ ধাতব যন্ত্রাংশ দিয়ে কম্পিউটার তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ তৈরী না হওয়ায় তিনি আধুনিক কম্পিউটারের পরিপূর্ণ রূপ দিতে পারেননি। তবে আজ আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তা ব্যাবেজের গঠনতত্ত্ব অনুযায়ী তৈরী করা হয়েছে। চালর্স ব্যাবেজের কম্পিউটারের গঠনতত্ত্বে রয়েছে পাচঁটি অংশ। যথা- স্টোর বা ভান্ডার, মিল, কন্ট্রোল, ইনপুট ও আউটপুট। অবশেষে ১৯৪৪ সালে বিশ্বখ্যাত হাভর্জ বিশ্ববিদ্যালয় ও আইবিএম কম্পানি যৌথ উদ্যোগগে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করে। তবে প্রথম পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ‘ইয়ানিক’ তৈরি হয় ১৯৪৬ সালে। এরপর থেকে যন্ত্রটি দ্রুত পরিবর্তিত হয় এবং গঠন ও আকৃতিতে অভিনবত্ব লাভ করে। সেই সাথে কম্পিউটারের ব্যবহারেও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কম্পিউটারের প্রজন্ম: বর্তমান নান ধরণের কম্পউটার আবিষ্কৃত হয়েছে। গঠনপ্রণালীর এক একটি বিশিষ্ট ধারাকে বলা হয় এক একটি প্রজন্মত। ১৯৬৪ সালে আবিষ্কৃত হয় প্রথম পূর্নাঙ্গ ইলেকট্রনিক কম্পিউটার ‘এনিয়াক” । চল্লিশের দশকের প্রথম জেরারেশন কম্পিউটার প্রায় দশ বছর রাজত্ব করেছে। অতঃপর এসেছে নতুন নতুন প্রজন্ম কম্পিউটার মডেল। বর্তমানে ব্যবহারে করা হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্ম কম্পিউটার । আগামী দশক নিয়ে এসেছে ‘পঞ্চম প্রজন্মের’ কম্পিউটার মডেল। বর্তমান পেয়েছি ইউনিভ্যাকÑ ১ আইসিএস- ২৯০০, আইবিএম - ৬৪০, সিস্টেম - ৩৬০ , এডস্যাক - ৪৩০০ সিরিজের মেইরফ্রেম মডেল। পঞ্চম পর্যায়ে ‘সুপার কম্পিউটার সইবার - ২০৫, ক্রে-১, ক্রে-২ ইত্যাদি
কম্পিউটারের গঠন: কম্পিউটারের অনেক যন্ত্রাংশ থাকলেও গঠনরীরিতে প্রধান দিক লক্ষ করা যায়। একটি হলো যান্ত্রিক সরঞ্জাম বা হার্ডওয়অর এবং অন্যটি প্রোগ্রাম সম্পর্কিত বা সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যারের মধ্যে রয়েছে তথ্য সংরক্ষণের স্মৃতি, অভ্যন্তরীণ কার্যের জন্য ব্যবহৃহ তাত্ত্বিক দিক, তথ্য সংগ্রহের জন্য ইনপুট অংশ, ফলাফল প্রদর্শদের জন্য্ আউটপুট অংশ এবং সকল বৈদ্যুতিক বর্তন্ ীএসব যান্ত্রিক সরঞ্জামের কাজ হলো প্রোগামের সাহায্যে কম্পিউটারকে কর্মক্ষম করে তোলা। বাংলাদেশে কম্পিউটার: বাংলাদেশে কম্পিউটারের পদযাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ মালে আণবিক শক্তি কমিশন ওইগ ১৬২০ সিরিজের একটি কম্পিউটার আমদানি মাধ্যমে। আশিক দশক পর্যন্ত এদেশে কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে এদেশে আনুষ্ঠানিক ও প্রতিষ্ঠানিকববে কম্পিউটারের শিক্ষা শুরু হয়। বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে কম্পিউটারের আগমন আমাদের দেশে ঘটলেও বর্তমানে তা ব্যাপকবাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।
কম্পিউটারের ব্যবহার: কম্পিউটার গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে তৈরী হলেও আজকের দিনে তা সব কাজের উপযোগী হয়ে উঠেছে। দ্রুত ও নির্ভুল গননা এবং তথ্য সংগ্রহ করে সঠিক হিসাবের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান অপরিসীম। যেসব কাজ মানুষের পক্ষে অসম্ভব, সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ, কম্পিউটারের মাধ্যমে যেসব কাজ অনেক সহজ ও দ্রুততর হয়েছে। কম্পিউটার এখন রোগীল রোগ নির্ণয় করতে পারে, চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পর্কে দিতে পারে সঠিক তথ্য ও দিক নির্দেশনা। কোনো প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মীর মাসিক বেতন, আয়-ব্যয় সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ কম্পিউটারের সাহায্যে করা যায়। কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বহুবছরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যদি নির্ভূলভাবে এবং সুসংবদ্ধভাবে সংরক্ষর করা যায়। কম্পিউটার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রন করে, প্লেনের বা ট্রেনের আসন সুশৃঙ্খলভাবে বন্টনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রেও ব্যাপকবাবে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল তৈরি এবং জমা রাখা হয়। গবেষণা পরিচালনা, তথ্য উপস্থাপন ও সংরক্ষণে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া বই ছাপার কাজে কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে সহজে বই বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে। ‘ভাস্কর কম্পিউটার ’ নির্দেশ পেলে যে কোনো জটিল ভাস্কর্য খোদাই করতে পারে। কম্পিউটাররের মাধ্যমে আসামিকে চিহ্নিত করা যায়। আাবার কম্পিউটারে দাবাসহ বিভিন্ন ধরণের খেলা রয়েছে, যা আমাদের চিত্তবনোদনের অন্যতম মাধ্যম। আর এভাবে কম্পিউটার ব্যবসায় -বাণিজ্য, চিকিৎসা, খেলাধুলা, শিল্পকারখানা, শ্ক্ষিা, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক, সামাজিক র্সবক্ষেত্রে এক গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার: গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে ঘটেছে অভাবনীয় সব পরিবর্তন ও সাফল্য। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সময় ও দূরত্ব জয় হয়েছে। বাংলাদেশেও তথ্য প্রযুক্তির এ জীয়নকাঠির স্পর্শে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। আর এই তথ্য প্রযুক্তির মূলে রয়েছে কম্পিউটার । বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর পথে তথ্য -যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বিপ্লব সাধিত হবে বলে আশা করা যায়। কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রীয়াকরণভ ও বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠ প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাই হলেঅ তথ্য -যোগাযোগ প্রযুক্তি । এর জন্য এক মাত্র উপায় হলো কম্পিউটার নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বিরূপ প্রতিক্রিয়া: কম্পিউটার আবিষ্কার এবং ব্যবহারে আধূনিক বিশ্বে তথা মানসমাজে কিছু বিরুপ প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করা যায়। যুদ্ধ বিগ্রহ, অস্ত্র নির্মাণ, আকাশ দখলের প্রতিযোগিতা প্রভৃতির পেছনে কম্পিউটারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এছাড়া ক¤িপউটারের মাধ্যমে সৃষ্ট ইন্টারনেট, ভিডিও গেম প্রভৃতির মাধ্যমে নানা কুরুচিপূর্ণ বিনোদন ব্যবস্থা তৈরী হয়েছে। কম্পিউটার অনেক সময় মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলো। তাছাড়া দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
উপসংহার: কম্পিউটারের বিস্তুত কর্মকান্ড নিয়েই আজকের জগৎ। এর সফল প্রয়োগ আমরা অতি সহজেই আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে উপনীত হতে পারি। শতাব্দীর এ বিস্ময়কর আবিষ্কারটিই সমস্যাসঙ্কুল দেশের মানুষকে আধাঁর থেকে আলোতে আনার পথ দেখাবে। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে কম্পিউটারের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
Share This Post