কারক ও বিভক্তি
বিভক্তি
বাক্যস্থির একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের অন্বয় সাধনের জন্য শব্দের সঙ্গে যেসব বর্ণ বা বর্নসমষ্টি যুক্ত হয়, তাদেরকে বিভক্তি বলে। যেমন-রহিমকে বাড়িতে দেখেছি। এখানে ‘রহিম’ এর সাথে ‘কে’ যুক্ত হয়ে রহিমকে এবং ‘বাড়ি’র সাথে ‘তে’ যুক্ত হয়ে বাড়িতে হয়েছে। সুতরাং ‘কে’ এবং ‘তে’ বিভক্তি । বিভক্তি যুক্ত হয়ে শব্দসমষ্টি বাক্যে ব্যবহৃত হলে, তাদেরকে পদ বলে। বিভক্তির প্রকারভেদ বিভক্তির প্রধানত দুই প্রকার। যেমন- শব্দ বিভক্তি ও ক্রিয়া বিভক্তি। শব্দ বিভক্তির আবার সাত প্রকার। যেমন-প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী। বিভক্তি চিহৃ স্পষ্ট না হলে সেখানে শূন্য বিভক্তি আছে বলে মনে করা হয়। সাত প্রকার বিভক্তির বচনভেদে আলাদা আলাদা চিহৃ রয়েছে ।যেমন-
বচনভেদে শব্দ বিভক্তির বিভিন্ন রূপ বা চিহৃ
বিভক্তি | একবচন | বহুবচন |
প্রথমা | অ,০ (শূণ্য) | রা, এরা, গুলো, গণ |
দ্বিতীয় | কে, রে | দিগে, দিগকে, দিগেরে |
তৃতীয় | দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক | দিগ দ্বারা, দিগকে, দিয়ে কর্তৃক |
চতুর্থী | কে, রে | দিগে, দিগকে, দিগেরে |
পঞ্চমী | হতে, থেকে | দিগ হতে, দিগ থেকে |
ষষ্ঠী | র, এর | দিগের, দের |
সপ্তমী | তে, এ, য় | দিগেতে, দিগে, গুলোর মধ্যে |
এগুলোর মধ্যে পঞ্চমী বিভক্তি ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে কারকে ব্যবহার হয় না । একবচন এবং বহুবচন বিভক্তিগুলো আকৃতিগত পার্থক্য দেখা যায়।
বিভক্তি যোগের নিয়ম-
১. অপ্রাণী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ‘রা’ যুক্ত হয় না। গুলি , গুলো, গুলো যুক্ত হয়। যেমন পাথর গুলো , গুরুগুলি।
২. অপ্রাণী বাচক শব্দের উওর ‘কে’ বা ‘রে’ বিভক্তি হয় না, শূণ্য বিভক্তি হয়। যেমন-কলম দাও।
৩. স্বরান্ত শব্দের উওর ‘এ’ বিভক্তির রূপ হয়- ‘য়’ বা ‘য়’ । ‘এ স্থানে ‘তে’ বিভক্তি ও যুক্ত হতে পারে।
যেমন- মা + এ=মায়ে, ঘোড়া + এ = ঘোড়া + এ = ঘোড়ায়, পানি + তে = পানিতে ।
৪. অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত শব্দের উওর প্রায়ই প্রথমায় ‘রা’ স্থানে ‘এরা’ হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির ‘র’ স্থলে ‘এর’ যুক্ত হয়।
যেমন-লোক + রা = লোকেরা । বিদ্বান ( ব্যঞ্জনান্ত) + রা = বিদ্বানেরা । মানুষ + এর = মানুষের । লোক + এর = লোকের ।
কিন্তু অ-কারান্ত , আ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এববচনে সাধারণত ‘র’ যুক্ত হয়, ‘এর যুক্ত হয় না।
যেমন-বড়ব, মামার, ছেলের।
কারক
‘কারক’ শব্দটির অর্থ -যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের ক্রিয়াপদের সাথে নাম পদের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে।
যেমন-রহিম সাহেব সকালে নিজ হাতে ঘর হতে ভিক্ষুকদেরকে খাদ্য দেন।
এ বাক্যের ক্রিয়াপদ হলো ‘দেন’ । এখন ক্রিয়াকে প্রশ্ন করে দেখা যাক বাক্যের অন্যান্য পদের অন্যান্য পদের সাথে কীভাবে এ পদটি সম্পর্ক বা সম্বন্ধ স্থাপন করেছে।
কে খাদ্য দেন ? - রহিম সাহেব-কর্তৃ কারক।
কী দেন ? - খাদ্য-কর্ম কারক।
কী দ্বারা দেন ? - নিজ হাতে-করণ কারক।
কাকে দেন ? - ভিক্ষুকদেরকে-সম্প্রদান কারক।
কোথা হতে দেন ? - ঘর হতে-অপাদান কারক।
কখন দেন ? - সকালে-অধিকরণ কারক।
উপরের বাক্যগুলোতে দেখা যায়, ‘দেন’ ক্রিয়াপদের সাথে বাক্যের প্রত্যেকটি পদের কোনো না কোনো সম্বন্ধ রয়েছে। সুতরাং এখানে প্রত্যকটি পদ কারক।
প্রকারভেদঃ ক্রিয়া পদের বাক্যের অন্যান্য পদের সম্বন্ধ বিবেচনা করে কারককে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়।
যেমন- ১। কর্তৃককারক;
২। কর্মকারক;
৩। করণ কারক;
৪। সম্প্রদান কারক;
৫। অপাদান কারক এবং
৬। অধিকরণ কারক।
Share This Post