বাংলা অনুজ্ঞা
বাংলা অনুজ্ঞা
অনুজ্ঞা পদ আদেশ, অনুরোধ, অনুমতি, প্রার্থনা , অনুনয় প্রভৃতি অর্থে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ কালে মধ্যম পুরুষে ক্রিয়াপদের যে রূপ হয়, তাকে অনুজ্ঞা পদ বলে। অনুজ্ঞা পদের গঠন।[বাংলা অনুজ্ঞা]১। মধ্যম পুরুষের তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠর্থাক সর্বনামের অনুজ্ঞায় ক্রিয়াপদে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না। মূল ধাতুটিই ক্রিয়াপদরূপে‘ ব্যবহৃত হয়।
যেমন- মধ্যম পুরুষ তুচ্ছার্থক বা ঘনিষ্ঠার্থক তুই ( বই ) পড়। তোরা ( বই ) পড়। কিছু অনুরোধ, আদেশ বা অনুরূপ অর্থে সম্ভান্তক মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘আপনি’ বা ‘আপনারা’ এবং সাধারণ মধ্যম পুরুষের সর্বনাম ‘তুমি’ বা ‘তোমরা’ পদের সঙ্গে যে অনুজ্ঞা পদের ব্যবহার হয়, তাতে বিভক্তি য্ক্তু থাকে। যেমন- সম্ভান্তক মধ্যম পুরুষ – আপনি ( আপনারা) আসুন ( আস্ + উন)। সাধারণ মধ্যম পুরুষ-তুমি ( তোমরা ) আস ( আস্ + অ)।
২। প্রাচীন বাংলা রীতিতে মধ্যম পুরুষের অনজ্ঞায় ক্রিয়ার সঙ্গে ‘হ’ যোগ করার নিয়ম ছিল। এই ‘হ’ বর্তমানে অ এবং ও-তে রূপান্তরিত হয়েছে । যেমন-
ক. ‘করহ (= কর) আপন কাজ, তাতে কিবা ভয় লাজ।’
খ. ‘অধম সন্তানে মাগো দেহ (দাও) পদচ্ছায়া।’
৩। ক. উওম পুরুষের অনুজ্ঞা পদ হতে পারে না, কারণ কেউ নিজেকে আদেশ করতে পারে না। খ. অপ্রত্যেক্ষ বলে নাম পুরুষের অনুজ্ঞা হয় না । তবে এই মত সকলে সমর্থন করেন না।
জ্ঞাতব্য
ক. নির্দেশক ভাবের সাধারণ বর্তমান কালের স¤্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের বিভক্তি-এর। যেমন-আপনি দেখেন। স¤্রমাত্মক মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞা পদের বিভক্তি ‘উন’ যেমন-আপনারা দেখুন। খ. চলতি ভাষায় ধাতুর মূল স্বর এ-কারান্ত বা ও-কারান্ত হলে উক্ত পার্থক্য লোপ পায়। যেমন- নেন, লন, নিন/ লউন, শোন।
১। ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞা
মূল ক্রিয়াপদের সঙ্গে -ইতে / তে বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ গঠন করা যায়। এই সমাপিকা ক্রিয়াপদ এবং থাক্ ধাতুর সঙ্গে (সাধারণ ) বর্তমান অনুজ্ঞার বিভক্তি যুক্তকরে যে ক্রিয়াপদ হয়, উভয়ে মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্ন করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে। যেমন- ( সে )-ইতে /-তে +-উক (করিতে/করতে থাকুক)। (তিনি/আপনি)-ইতে+ উন (করিতে/করতে থাকুক)। ( তুমি )-ইতে/-তে +-অ-ও (করিতে / করতে থাক / থাকো) (তুই)-ইতে/তে +-০(করিতে/ করতে থাক) মূল ধাতুর অসাপিকা ক্রিয়া বিভক্তি ইতে তে যুক্ত হয়; এরূপ বিভক্তি যুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া সর্বদা অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে। এই অসামাপিকা ক্রিয়া এবং সাধারণ বর্তমানের অনুজ্ঞার ক্রিয়া বিভক্তিযুক্ত থাক্ ধাতু (ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার ) মিলে যৌগিক ক্রিয়া উৎপন্œ করে। এই যৌগিক ক্রিয়া ঘটমান বর্তমান অনুজ্ঞার অর্থ প্রকাশ করে। থাক্ ধাতুর সঙ্গে যুক্ত ক্রিয়াবিভক্তিরগুলোই অনুজ্ঞা অর্থ প্রকাশ করে। মূল ক্রিয়া থেকে উৎপন্ন অসমাপিকা ক্রিয়াটি ঘটমানতা প্রকাশে সাহায্য করে।
২। ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা উপরি উক্ত কারণেই ঘটমান ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞার জন্য পৃথক ক্রিয়াবিভক্তিসমূহের অস্তিত্ব স্বীকার করা অপ্রয়োজনীয়। যেমন- -ইতে/-তে +-ইবেন/-বেন (করিতে থাকিবেন/ করতে থাকবেন)। -ইতে/-তে + ইও-এ/-ও (করিতে থাকি ও / করতে থেকো)। -ইতে/-তে +-ইস (করিতে থাকিস / করতে থাকিস)। -ইতে/-তে +-ইবে/ ঘে (করিতে থাকিবে / করতে থাকবে)।
জ্ঞাতব্য ক. ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞায় উওম পুরুষ ব্যবহৃত হয় না। খ. সম্ভান্তক মধ্যম পুরুষের সাধারণ ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় ব্যবহৃত হয়।
অনুজ্ঞা বাক্য গঠন
ক. বর্তমান কালের অনুজ্ঞা
১. আদেশঃ কাজটি করে ফেল। তোমরা এখন যাও।
২. উপদেশঃ সত্য কথা গোপন করো না। কড়া রোদে ঘোরাফেরা করিস না। পাতিস নে শিলাতলে পদ্মপাতা।
৩. অনুরোধঃ আমার কাজটা এখন কর। অঙ্কটা বুঝিয়ে দা না।
৪. প্রার্থনাঃ আমার দরখাস্তটা পড়–ন।
৫. অভিশাপঃ মর পাপিষ্ঠ।
খ. ভবিষ্যৎ কালের অনুজ্ঞা
১. আদেশেঃ সদা সত্য কথা বলবে।
২. সম্ভাবনায়ঃ চেষ্ঠা কর, সবই বুঝতে পারবে।
৩. বিধান অর্থেঃ রোগ হলে ওষুধ খাবে।
৪. অনুরোধেঃ কাল একবার আসিও (বা এসো, বা আসিবে)।
Share This Post