ভাবসম্প্রসারণ “দুঃখের মতো এত বড় পরশ পাথর আর নেই।”
দুঃখের মতো এত বড় পরশ পাথর আর নেই।
মূলভাবঃ পরশ পাথরের স্পর্শে লোহা যেমন খাটি সোনায় পরিণত হয়, তেমনি দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে মানবজীবন সার্থক হয়ে উঠে। সম্প্রসারিত ভাবঃ মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ পাশাপাশি অবস্থান করে।একটির পর অপরটি আসে পর্যায়ক্রমে। তন্মধ্যে সুখের সময় মানুষ ভোগ বিলাসে জীবন ভাসিয়ে দিলে আনন্দ পাওয়া যায় সত্য, কিন্তু তাতে জীবনের প্রকৃত স্বরুপ জানা যায় না। দুঃখে পড়ে মানুষ নিজেকে চেনে। নিজের শক্তি সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দুঃখের মধ্যে দিয়েই উপলব্ধি করা যায়। দুঃখের পরশেই মানুষের জীবন হয় মানবিকবোধ আলোকিত, মানুষ হয়ে উঠে মহানুভব, মহীয়ান। তাই মানব চরিত্রে পূর্ণ বিকাশের জন্য দুঃখকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুঃখ কষ্ট ও ত্যাগ তিতিক্ষা ব্যতীত ব্যাক্তি জীবন কিংবা জাতীয় জীবনে সফলতা আসতে পারে না। দুঃখের আবেদন চিরন্তন। ইংরেজ কবি জন কিটস্ বলেছেন, “Sorrow is knowledge’’ দুঃখবোধই প্রঙ্গার উৎস। দুঃখবোধ মানুষকে স্রষ্টাভিমুখী করে। দুঃখের অনলে পুড়ে মনুষ্যত্ব বিবেক খাঁটি স্বর্ণে পরিণত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় “দুঃখই জগতে একমাত্র সকল পদার্থের মূল্য।” মাতৃ স্নেহের মূল্য দুঃখে, পতিব্রত্যের মূল্য দুঃখে, বীর্যেও মূল্য দুঃখে, পুণ্যের মূল্য দুঃখে। তাই মহামানবগন দুঃখকে পরশ পাথররূপে বর্ণনা করেছেনা । পাশ পাথরের সংস্পর্শে লোহা যেমন সোনা হয়, তেমনি দুঃখরূপ পাশ পাথরের স্পর্শে মানুষের সব মালিন্য নিঃশেষ হয়ে জীবন সার্থকতার মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে। মন্তব্যঃ জগতের সব সাফল্যের সাথে জড়িত আছে সীমাহীন দুঃখ কষ্টের ইতিহাস। তাই কবির কথায় বলা যায়-
ধন কহে,“ দুঃখ তুমি পরশ মঙ্গল তোমারি দহনে আমি হয়েছি উজ্জ্বল।”
Previus
Next
Share This Post