রচনাঃ টেলিভিশন


টেলিভিশন

ভূমিকাঃ টেলিভিশন বিংশ শতাব্দীর একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। এ যন্ত্রের সাহায্যে মানুষ ঘরে বসে দূর দূরান্তের কোনো ঘটনার ছবি ও বাণী একই সঙ্গে দেখতে ও শুনতে পারে।বর্তমানে বিশে^ টেলিভিশন চিওবিনোদনের সবচেয়ে সাধারণ মাধ্যম। প্রতিদিন অসংখ্যা চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। টেলিভিশন বর্তমান সভ্যতায় এমন এক অবস্থানে পৌঁছে গেছে যে, প্রায় প্রত্যেক মধ্যবিও শ্রেণীর এমনকি শ্রমজীবি শ্রেণীর পরিবারে ও কমপক্ষে একটি টেলিভিশন সেট রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে টেলিভিশন অনুষ্ঠান গুলো শুধু বিনোদনমূলক নয়; শিক্ষামূলক ও। টেলিভিশনঃ ইংরেজী টেলিভিশন শব্দটি গ্রিক ট্রেলে অর্থাৎ ‘ দূর ’ এবং ল্যাটিন ভিশিন অর্থাৎ দৃশ্য শব্দ দুটির সংযোগে তৈরী হয়েছে। টেলিভিশন শব্দের আভিধানিক অর্থ দূরদর্শন । প্রকৃত পক্ষে টেলিভিশন হচ্ছে একটি বৈদুত্যিক যন্ত্র এর সম্মুখভাগে একটি সিগটে বা পর্দা থাকে। এতে সবাক চলচ্চিত্র ।মুভির পিকচার দেখা যায়।

আবিষ্কারঃ জার্মান বিজ্ঞানী পল নেপকো প্রথম টেলিভিশন সম্ভাব্যতা সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন। বাতাসের মতো ছবি ও বায়ু তরঙ্গে দূরে যেতে পারে তাঁর এ তথ্য অনুসরণ করেই টেলিভিশনে প্রাথমিক গবেষণা শুরু হয়। এ তথ্যের উপর ভিওি করে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয় ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড জন বেয়ার্ড এ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এ তথ্যের উপর ভিওি করে পরীক্ষা নিরক্ষা চালানো হয় ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড জন বেয়ার্ড এ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তারপর ক্রমে উন্নতি লাভ করে যন্ত্রটি ১৯৪৫ সালে পূর্ণ রুপ লাভ করে।

টেলিভিশন ব্যবহারেঃ আমাদের দেশে টেলিভিশনে চালু হয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে । প্রথম পর্যায়ে ঢাকা ও পাশ^বর্তী এলাকা গুলোর মধ্যে টেলিভিশন প্রচার সীমাবদ্ধ ছিল। এখন চট্রগ্রাম, খুলনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, প্রভৃতি স্থানে উপকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার সমস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে নেটওয়ার্ক আওতায় এসেছে। খবর, সিনেমা, নাটক , গান , কথিকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রম্য কথকতা, বির্তক প্রতিযোগিতা , সাহিত্য অনুষ্ঠানে ও শিশুদের জন্য নানাবিধ অনুষ্ঠান ইত্যাদি বিটিভি প্রচার করে থাকে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন কার্যবলির সরকার টেলিভিশন মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করে থাকে। বর্তমান স্যাটেলাইটে প্রযুক্তির কল্যাণে টেলিভিশন এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। কেননা এর মাধ্যমে আমরা সার বিশ্বের বিভিন্ন চ্যানেল উপভোগ করতে পারছি।

জাতীয় জীবনে টেলিভিশনঃ টেলিভিশনে মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, নিরক্ষরতা, দূরীকরণ , পরিবার পরিকল্পনা কৃষি ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে থাকে । জনগন ও জাতীয় সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে ঘনিষ্টভাবে পরিচিত হয়ে সচেতন হয়ে ওঠতে পারে। আমাদের দেশের টেলিভিশন যেহেতু সরকারের নিয়ন্ত্রণধীন , সে কারণে সরকার কর্মতৎপরতা ও দেশের উন্নয়নে প্রক্রিয়ার সরকারি দলের ভূমিকা জনগণকে অবহিত করার ব্যাপারে টেলিভিশন মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করতে হয়। এ ছাড়া জনমত সৃষ্টিতে ও টেলিভিশন কার্যকর ভূমিকা রাখে।

শিক্ষা টেলিভিশনঃ শিক্ষার উন্নয়নে টেলিভিশন ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেলিভিশন সাহায্যে শিক্ষা বিস্তারিত অনেক সহজ ও সুগম হয়েছে । এর সাহায্য হাতে কলমে বহুজনকে একত্রে শিক্ষাদান করা যায় । তা তাছা এতে শিক্ষাদান বেশি চিওাকর্ষণ ও উপভোগ্য হয়। কারণ কোনো বিষয়ে শিক্ষাদান করতে যদি তথ্য প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যে দৃশ্য ও দেখানো হয়, তবে সে শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠে। আর এটা একমাত্র টেলিভিশন মাধ্যমেই সম্ভব। বর্তমানে পাশ্চত্য দেশসমূহের টেলিভিশনে মাধ্যমে ঘরে ঘরে শিক্ষা পৌঁছিয়ে দেবার রয়েছে। আমাদের দেশে অনুরুপ পর্যায়ে না হলে ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারে টেলিভিশনে ভূমিকা কম নয়। টেলিভিশনে প্রচারিত বির্তক, আলোচনা, সেমিনার, অভিমত ইত্যাদি অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সমস্যা আলোচিত হয়। এ ধরনের অনেক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞের অভিমত ও আলোচনায় দর্শকরা উপকৃত হন। দেশের পশ্চাৎপদ জনগণের মধ্যে উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারে টেলিভিশন কিছুটা হলে ও ভূমিকা রেখেছে। টেলিভিশন মাধ্যমে সম্প্রচারিত দূরশিক্ষণ কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গেছে। উন্মুক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণ কর্মসূচিতে বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ভূমিকা পালন করছে। তা ছাড়া শিশু কিশোরসহ সকলের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে প্রচারে ও আমাদের টেলিভিশন যথেষ্ট সচেষ্ঠ ।

সংবাদ মাধ্যমে হিসেবে টেলিভিশনঃ দেশ ও বিদেশে প্রতিনিয়ত যেসব নিত্য নতুন ঘটনা ঘটছে, তা জানার অন্যতম নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো টেলিভিশন। স্যাটেলাইট চ্যানেলের বদৌলতে টেলিভিশন এখন ২৪ ঘন্টা তথ্য প্রদানে সক্ষ্যম। বিশ্বব্যাপী গণযোগাযোগের স্যাটেলাইট যুগে বিশ্ব পরিণত হয়েছে global village বা বৈশ্বিক গ্রামে। বিশ্বব্যাপী গণযোগাযোগের জাল বিস্তারে টেলিভিশন পালন করছে অনন্য ভূমিকা। বিনোদন মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনঃ টেলিভিশন গতিময় কর্মকান্ডের মধ্যে এনে দেয় দু’দন্ড বিশ্রাম ও বিনোদনের সুযোগ। এত বৈচিত্র্য, না থাকলে সংগীত নৃত্য , নাটক, চলচ্চিত্র, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি উপভোগের সুযোগ আমাদের টেলিভিশনে রয়েছে। টেলিভিশনের সুবাদেই আমরা মাঠের হুজুগে ভিড় শামিল না হয়ে ও বিশ্বকাপ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খেলা ঘরে বসে দেখতে পারি। সিনেমা হলে না গিয়ে ও ঘরে বসে নানা চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারি।

জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণে টেলিভিশনঃ বর্তমানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যাকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। এই সমস্যার কারণে খাদ্য সংকট আবাসিক সমস্যা, বেকার সমস্যা সহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যাকে মোকাবেলা করতে না পারলে আমাদের জীবন বিপর্যন্ত হয়ে যাবে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানোর জন্য টেলিভিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসংখ্যা ভয়াবহ রুপ এবং জন্ম নিয়ন্ত্রন সম্পর্কিত সচেতনাতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে টেলিভিশনে মাধ্যমে এ সমস্যা লাঘব করা সম্ভব। জনসংখ্যার ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র, নাটক, টেলিফিল্ম প্রচার করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন করা যায়।

কৃষি উন্নয়নে টেলিভিশনঃ বাংলাদেশের শতকারা ৮৫ ভাগ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল । কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষকরা অশিক্ষিত হওয়ার তারা বিজ্ঞানভিওিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ । এক্ষেত্রে টেলিভিশনের সাহায্যে অনুষ্ঠান সম্প্রচারণে মাধ্যমে কৃষি জাতের বিভিন্ন দিক যেমন জমি চাষ দেওয়া, বীজ সংগ্রহ করা, পরিমান মত কীটনাশক ও সার ব্যবহার করা, সময়মতো সেচ দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করা যেতে পারে।

উপকারিতাঃ একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে বর্তমান বিশ্বে টেলিভিশনে যে কতটা প্রয়োজন রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। টেলিভিশনকে বাদ দিয়ে আজকের দুনিয়াকে কল্পনাই করা যায় না। টেলিভিশনে হলো আনন্দের উৎস ও শিক্ষার মাধ্যম। টেলিভিশন মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তব্য সহজে দর্শক শ্রেণীর কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে বা ঘটছে তা আমরা ঘরের কোণে বসেই দেখতে পাই। টেলিভিশন দেখে আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই উপকৃত হয়। টেলিভিশন মানুষকে নানা বিষয়ে অবহিত করে। দেশ গঠনের ও টেলিভিশন জনগণের মধ্যে সচেতনতা এনে দেয়। অপকারিতাঃ টেলিভিশনে গুরুত্ব অথ্যধিক । তবে তার একটা উল্টো দিক ও আছে । স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে কিছু বিদেশী অপশক্তি তরুণ প্রজন্মকে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে ছিন্নমূল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা কুরুচিপূর্ণ এবং স্থুল বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে দেশের তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক অধঃপতন ও সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিতে আগ্রহী । বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি মুক্তবাজার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে স্যাটেলাইট চ্যানেলে সিগারেটসহ নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে ব্যস্ত । তাদের উদ্দেশ্য দেশীয় পন্য ও কুটির শিল্প ধ্বংস করে এদেশের তাদের পণ্যের একচেটিয়া বাজার তৈরী করা। এসব ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থরক্ষার সতর্কতামূলক কার্যকর নিয়ন্ত্রন থাকা দরকার ।

উপসংহারঃ জগতের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ভালো মন্দ দুটো দিক রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে ভালো দিকগুলোকে গ্রহন করা এবং মন্দ দিকগুলোকে পরিহার করা । আমাদের দেশের মতো উন্নয়ন শীল দেশে জাতীয় পুনর্জাগরণ ও অগ্রগতির স্বার্থে টেলিভিশনকে শিক্ষা সংস্কৃতি ও উন্নয়ন স্বার্থে টেলিভিশনকে শিক্ষা সংস্কৃতি ও উন্নয়নশীল রাজনীতির মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জাতির নৈতিক চরিত্রের গঠনমূলক উওরণ ঘটানোর ক্ষেত্রে টেলিভিশনকে আমরা কার্যকর বাহন হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।

রচনাঃ বসন্তকাল
Previus
রচনাঃ ট্রেনে ভ্রমন
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম