শব্দ - গঠন অনুসারে (বাংলা ব্যাকরণ)
শব্দ (গঠন অনুসারে)
ভাষার প্রকাশ নির্ভর করে শব্দের গঠনের উপর। ভাষার গঠন অনুসারে শব্দকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১.মৌলিক শব্দ ও ২. সাধিত শব্দ।মৌলিক শব্দ যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় না ভেঙে আলাদা করা যায় না, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। মৌলিক শব্দগুলোই হচ্ছে ভাষার মূল উপকরণ। যেমন- গোলাপ, নাক, লাল, তিন, বই, কলম ইত্যাদি।
সাধিত শব্দ যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করা হলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলোকে সাধিত শব্দ। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে, কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন-নীলাকাশ (নীল যে আকাশ), চাঁদমুখ (চাঁদের মতো মুখ), ঢাকাই ( ঢাকা + আই) ডুবুরি ( ডুব + উরি) , প্রশাসন ( প্র + শাসন), গরমিল (গর+ মিল) ইত্যাদি।
বিভিন্ন উপায়ে সাধিত শব্দ গঠন
১. প্রত্যয় যোগেঃ শব্দ বা ধাতুর পরে পত্যয় যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন-
নাচ + অন = নাচন ( কৃৎ প্রত্যয় যোগে); ঢাকা + আই = ঢাকাই ( তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে)।
২। উপসর্গ যোগেঃ শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা হয় হয় । যেমন- পরা + জয় = পরাজয় (সংস্কৃত উপসর্গ যোগে); অনা + বৃষ্টি = অনাবৃষ্টি ( খাঁটি বাংলা উপসর্গ যোগে);
৩। সমাসের মাধ্যমেঃ সমাসের সাহায্যে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- গাছে পাকা = গাছপাকা (৭মী তৎপুরুষ); রান্না করার ঘর = রান্না ঘর ( মধ্যপদলোপী) কর্মধারয়)।
৪। সন্ধির মাধ্যমেঃ সন্ধির মাধ্যমে ও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় ( স্বরসন্ধি যোগে); উৎ + লাস = উল্লাস ( ব্যঞ্জনসন্ধি যোগে); তিরঃ + কার = তিরস্কার (বিসর্গ সন্ধি যোগে) ।
৫। বিভক্তি যোগ করেঃ বাক্যস্থিত বিভিন্ন শব্দের মধ্যে পরস্পর অন্বয় সাধনের জন্য শব্দের শেষে যে সব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়, তাদের বিভক্তি বলে। বাংলা ভাষার সর্বনাম ও ক্রিয়ার শেষে বিভক্তি যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- তোমাকে ( কে‘বিভক্তি ) যেতে ( এ বিভক্তি ) হবে।
৬। পদ পরিবর্তন করেঃ পদ পরিবর্তন করে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- পৃথিবী > পার্থিব ( বিশেষ্য থেকে বিশেষণ ) সুন্দর > সৌন্দর্য (বিশেষণ থেকে বিশেষ্য )
৭। দ্বিরক্তির মাধ্যমেঃ বিরক্তির মাধ্যমে অনেক নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- কথায় কথায়, বাড়ি বাড়ি ইত্যাদি।
৮। প্রবাদ = বচনের মাধ্যমেঃ বাংলা ভাষার শব্দ গঠনে প্রবাদ -প্রবচনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেননা এগুলো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন- অক্কা পাওয়া = মারা যাওয়া ; রাবণের চিতা = চির অশান্তি।
Share This Post