অধিকরণ কারক (বিস্তারিত)


অধিকরণ কারক

যে স্থান, যে সময় বা যে বিষয়ে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে অধিকরন কারক বলে। এককথায় ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অধিকরণ কারক সাধারণত সপ্তমী বিভক্তি হয়। যেমন- বনে বাঘ থাকে।

সকালে সূর্য উঠে।

এখানে ‘বনে’ এবং ‘সকালে’ অধিকরণ কারক।

ক্রিয়াকে কোথায়, কখন এবং কিসে ইত্যাদি প্রশ্ন করলে সাধারণত অধিকরণ কারক পাওয়া যায়। প্রকারভেদঃ 

অধিকরণ কারক তিন প্রকার। যথা-

১. কালাধিকরণ,

২. আধারাধিকরণ এবং

৩. ভাবাধিকরণ।

১। কালাধিকরণঃ  যে সময়ে বা যে কালে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কালাধিকরণ বলে।

যেমন- ১. সকালে সূর্য উঠে।

২. বসন্তে কোকিল ডাকে।

২। আধারাধিকরণঃ  যে আধার বা স্থানে ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, তাকে আধারাধিকরণ বলে।

যেমন- তিলে তৈল আছে।

আধারাধিকরণ তিন প্রকার । যথা-


ক. ঐক্যদেশিক;

খ. অভিব্যাপক এবং

গ. বৈষয়িক।

ক. ঐকদেশিকঃ বিরাট স্থানের যে কোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে, তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে।

যেমন- পুকুরে মাছ আছে। (পুকুরের যে কোন এক স্থানে )

বনে বাঘ আছে। ( বনের যে কোন এক স্থানে )

আকাশে চাঁদ উঠেছে । ( আকাশের যে কোন এক স্থানে )

সামীপ্য অর্থে ও ঐকদেশিক অদিকরণ হয়। যেমন- ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে।

( ঘাটের কাছে ) দুয়ারে দাঁড়ায়ে ভিক্ষুক। ( দুয়ারের কাছে )

খ. অভিব্যাপকঃ  উদ্দিষ্ট বস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে, তবে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে।

যেমন- তিলে তৈল আছে । ( তিলের সারা অংশ ব্যাপী)

নদীতে পানি আছে ।( নদীর সমস্ত অংশ ব্যাপ্ত করে)

গ. বৈষয়িকঃ  বিষয় বিশেষে বা কোনো বিশেষ গুণে কার ও কোনো দক্ষতা থাকলে সেখান বৈষয়িক অধিকরণ হয়। যেমন- মিতুল অংকে কাঁচা , কিন্তু ব্যাকরণে ভালো।

৩। ভাবাধিকরণঃ  যদি কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য অন্য ক্রিয়ার কোনো রূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, তবে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। যেমন- কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়। সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়।

ভাবাধিকরণে সর্বদাই সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হঢ বলে একে ভাবে সপ্তমী বলা হয়। অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ হয় বলে এক ভাবে সপ্তমী বলা হয়। অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহারঃ

১. প্রথমা বা শূণ্য বিভক্তি ঃ সারারাত বৃষ্টি ছিল। আমি ঢাকা যাব। বাবা বাড়ি নেই।

২. দ্বিতীয়া বিভক্তিঃ ঘরকে যাও।

৩. তৃতীয়া বিভক্তিঃ  বড় রাস্তা দিয়ে যাও। খিলিপান ( এর ভিতর ) দিয়ে ওষুধ খাবে।

৪. পঞ্চমী বিভক্তিঃ  বাস থেকে নদী দেখা যায়।

৫. ষষ্ঠী বিভক্তি  কপালের লেকন না যায় খন্ডন।

৬. সপ্তমী বিভক্তিঃ নদীতে মাছ আছে। এ বাড়িতে কেউ নেই।

অধিকরণ কারকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণঃ

আকাশে চাঁদ উঠেছে - অধিকরণে ৭মী

আপনার দেশ কোথায়? - অধিকরণে শূণ্য

একদিন যাব - অধিকরণে শূণ্য

এ জমিতে সোনা ফলে - অধিকরণে ৭মী

কাজে মন দাও - অধিকরণে ৭মী

গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল - অধিকরণে ৭মী

ঘরে পানি পড়ে - অধিকরণে ৭মী

ছেলেটি অংকে কাঁচা - অধিকরণে ৭মী

ছায়ায় বস - অধিকরণে ৭মী

জলে কুমির থাকে - অধিকরণে ৭মী

তিনি বাড়ি নেই - অধিকরণে শূণ্য

তিনি এবার হজে¦ গেলেন - অধিকরণে ৭মী

তিলে তৈল আছে - অধিকরণে ৭মী

তিনি ব্যাকরণের পন্ডিত - অধিকরণে ৭মী

তিনি শুক্রবারে আসবেন - অধিকরণে ৭মী

তিনি ঢাকা থাকেন - অধিকরণে শূণ্য

এ বছর ভালো ফসল জন্মেছে - অধিকরণে শূণ্য

রাতে তারা দেখা যায় - অধিকরণে শূণ্য

পড়াতে তার মন বসে না - অধিকরণে ৭মী

প্রভাতে সূর্য ওঠে - অধিকরণে ৭মী

পাঠেতে মন দাও - অধিকরণে ৭মী

বনে বাঘ থাকে - অধিকরণে ৭মী

বসন্তে ফুল ফুটে - অধিকরণে ৭মী

বাবা আজ বাড়ি নেই - অধিকরণে শূণ্য

সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ
Previus
অপাদান কারক (বিস্তারিত)
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম