কৃৎ প্রত্যয় (বিস্তারিত)
বাংলা কৃৎ প্রত্যয়
১.শূণ্য (০) প্রত্যয়ঃ কোন প্রকার প্রত্যয় চিহৃ ব্যতিরেকেই কিছু ক্রিয়া প্রকৃতি বিশেষ্য ও বিশেষণ পদরূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এরূপ স্থলে (০) শূণ্য প্রত্যয় ধরা হয় । যেমন- এ মোকদ্দমার তোমার জিত্ হবে না , হার-ই হবে। গ্রামে খুব র্ধ পাকড় চলছে।
২. অ-পত্যয়ঃ কেবল ভাববাচ্যে অ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
র্ধ + অ = ধর,
র্মা + অ = মার ।
বাংলায় অ-প্রত্যয় সর্বত্র উচ্চারিত হয় না। যেমন-হার + অ = হার, জিত + অ = জিত। কোনো কোনো সময় অ-প্রত্যয় যুক্ত কৃদন্ত শব্দের দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়। যেমন-(আসন্ন সম্ভাব্যতা অর্থে দ্বিত্বপ্রাপ্ত ) = কাঁদ্ + অ = কাঁদ কাঁদ (চেহারা)।
এরূপ পড় + অ = পড়পড় র্ম + অ = মরমর ( অবস্থা) ইত্যাদি।
কখনো কখনো দ্বিত্বপ্রাপ্ত কৃদন্তপদে উ-প্রত্যয় হয়। যেমন-
ডুব্ + উ = ডুবুডুবু।
উড়ু + উ = উড়–উড়–।
৩. অন্ প্রত্যয়ঃ ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে ‘অন’ প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। যেমন-কাঁদ্ + অন = কাঁদন (কান্নার ভাব) । এরূপ-নাচন, বাড়ন; ঝুলন, দোলন।
৪. অনা-প্রত্যয়ঃ দুল্ + অনা = দুলনা > দোলনা। খেল্ + অনা = খেলনা।
৫. অনি, (বিকল্পে) উনি-প্রত্যয়ঃ র্চি + অনি = চিরনি >চিরুনি। বাঁধ ্ + অনি = বাঁধনি > বাঁধুনি। আঁট্ + অনি = আঁটনি > আঁটুনি।
৬. অন্ত-প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে ‘অন্ত’ প্রত্যয় হয়। যেমন- উড়– + অন্ত =উড়ন্ত, ডুব্ + অন্ত = ডুবন্ত।
৭. অক-প্রত্যয়ঃ মুড় + অক = মোড়ক । ঝল্ + অক = ঝলক।
৮. আ-প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘আ’ প্রত্যয় হয়। যেমন- পড়– + আ = পড়া ( পড়া বই।) এরূপ রাঁধ (বিশেষ্য), রাঁধা (বিশেষণ ), কেনা, বেঁচা, ফোঁটা ইত্যাদি।
৯. আই-প্রত্যয়ঃ ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ‘আই’ প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন- চড় + আই = চড়াই, সিল + আই = সিলাই। ১০. আও-প্রত্যয়ঃ ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ‘আও’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- পাকড়– + আও = পাকড়াও, চড়– + আও = চড়াও।
১১. আন (আনো) প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য গঠনে প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে ‘আন/আনো ’ প্রত্যয় হয়। যেমন- চাল্ + আন = চালান/ চালানো। মান্ + আন = মানান/মানানো।
১২. আনি-প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য গঠনে আনি প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- জান্ + আনি = জানানি, শুন + আনি = শুনানি, উডু + আনি = উড়ানি, উড়– + উনি = উড়–নি।
১৩. আরি বিকল্পে রি/উরি প্রত্যয়ঃ ডুব্ + আরি/উরি = ডুবুরি।
এরূপ-ধুনারি, পুজারি ইত্যাদি।
১৪. আল-প্রত্যয়ঃ মাত + আল = মাতাল, মিশ্ + আল = মিশাল।
১৫. ই-প্রত্যয়ঃ বিশেষ গঠনে ‘হ’ প্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। যেমন- ভাজ্ + ই = ভাজি, বেড় + ই = বেড়ি।
১৬. ইয়া > ইয়ে প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে ইয়া/ইয়ে প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন- মর + ইয়া = মরিয়া ( মরতে প্রস্তুত ) বল্ + ইয়ে = বলিয়ে ( বাকপুট) এরূপ-নাচিয়ে, গাইয়ে, লিখিয়ে, বাজিয়ে, কইয়ে ইত্যাদি।
১৭. উ প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘উ’ প্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। যেমন- ডাক্ + উ = ডাকু, ঝাড়– + উ = ঝাড়–, উড়– + উ = উড়– (দ্বিত্ব উড়–উড়–)
১৮. ‘উয়া’ বিকল্পে ‘ও’ প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘উয়া’ এবং ও প্রত্যয় হয়। যেমন- পড়– + উয়া = পড়–য়া > পড়ো। উডু + উয়া = উডুয়া > উড়ো। উডু + ও = উড়ো > ( চিঠি)।
১৯. তা প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে ‘তা’ প্রত্যয় হয়। যেমন- র্ফি + তা = ফিরতা > ফেরতা, পড়– + তা = পড়তা, বহ্ + তা = বহতা।
২০. তি প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘তি’ প্রত্যয় হয়। যেমন- ঘাট্ + তি = ঘাটতি, বাড়–্ + তি = বাড়তি।
২১. না প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য গঠনে ‘না’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- কাঁদ + না = কাঁদনা > কান্না, রাঁধ্ + না = রাঁধনা > রান্না, এরূপ-ঝরণা ইত্যাদি।
সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়ঃ
১.অনট প্রত্যয়ঃ (‘ট’ ইৎ বিলুপ্ত হয়, ‘অন’ থাকে) : √ নী + অনট = √নী + অন > নে + অন ( গুনসূূত্রে) = নয়ন। √ শ্রু + অনট = √শ্রু + অন (গুন ও সন্ধির ফলে) = শ্রবণ। এরূপ-স্থান, ভোজন, নর্তন, দর্শন, ইত্যাদি।
২. ক্ত প্রত্যয়ঃ (‘ক’ ইৎ ‘ত’ থাকে) - যথা- জ্ঞা + ক্ত (জ্ঞা + ত) = জ্ঞাত, খ্যা + ক্ত =খ্যাত।
বিশেষ নিয়মঃ
ক) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে নি¤œ লিখিত ধাতুর অন্ত্যস্বর ‘ই’ কার হয়।
যেমন-পঠ + ক্ত = ( পঠ + ই + ত ) = পঠিত। এরূপ, লিখিত , বিদিত, বেষ্টিত, চলিত, পতিত, লুন্ঠিত, ক্ষুধিত, শিক্ষিত ইত্যাদি।
খ) ক্ত প্রত্যয় যুক্ত হলে, ধাতুর অন্তস্থিত ‘চ’ ও ‘জ’ স্থলে ‘ক’ হয়।
যেমন- √সিচ্ + ক্ত = (সিক + ত) =সিক্ত। √মুচ + ক্ত = মুক্ত, √ ভুজ্ + ক্ত = ভুক্ত।
গ) এ ছাড়া ক্ত প্রত্যয় পরে থাকলে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। এখানে এরূপ কয়েকটি প্রকৃতি প্রত্যয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো ।
যেমন- √গম্ + ক্ত = গত, √গ্রন্থ + ক্ত = গ্রথিত, √চুর + ক্ত = চূর্ণ, √ছিদ্ + ক্ত = ছিন্ন, √জন্ + ক্ত = জাত, √দা + ক্ত = দও, √দহ্ + ক্ত = দগ্ধ, √বচ্ + ক্ত = উক্ত, √বপ্ + ক্ত = উপ্ত, √মুহ্ + ক্ত = মুগ্ধ, √যুধ্ + ক্ত = যুদ্ধ, √লভ্ + ক্ত = লব্ধ, √স্বপ্ + ক্ত = সুপ্ত, √সৃজ্ + ক্ত = সৃষ্ট, √হন্ + ক্ত =হত।
৩. ক্তি-প্রত্যয়ঃ (‘ক’ ইৎ ‘ত’ থাকে) : √গম্ + ক্তি = গম + তি = গতি ( এখানে ‘ম’ লোপ হয়েছে।) বিশেষ নিয়ম ক) ‘চ’ এবং ‘জ’ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন- √বচ্ + ক্তি = উক্তি, √মুচ্ + ক্তি = মুক্তি, √ভজ্ + ক্তি = ভক্তি। খ) নিপাতনে সিদ্ধঃ যেমন- √গৈ + ক্তি = গীতি, √সিধ্ + ক্তি = সিদ্ধি, √বুধ্ + ক্তি = বুদ্ধি। √শক্ + ক্তি = শক্তি।
৪. তব্য ও অনীয় প্রত্যয়ঃ কর্ম ও ভাববাচ্যের ধাতুর পরে তব্য ও অনীয় পেত্যয় হয়। যেমন- ক) তব্যঃ √কৃ + তব্য = কর্তব্য, √দা + তব্য = দাতব্য, √পঠ্ + তব্য = পঠিতব্য। খ) অনীয়ঃ √কৃ + অনীয় = করণীয়, √রক্ষ + অনীয় = রক্ষণীয়। এরূপ, দর্শনীয়, পানীয়, শ্রবণীয়, পালনীয় ইত্যাদি।
৫. তৃচ প্রত্যয়ঃ (‘চ’ ইৎ ‘তৃ’ থাকে): প্রথমা একবচনে ‘তৃ’ স্থলে ‘তা’ হয়। যেমন-দা + তৃচ = দা + তৃা, দা + তা = দাতা। √মা + তৃচ = মাতা। √ক্রী + তৃচ = ক্রেতা। বিশেষ নিয়মঃ √যুদ্ + তৃচ = যুধ্ + তা = যোদ্ধা।
৬. ণক প্রত্যয়ঃ (‘ণ’ ইৎ ‘অক’ থাকে। √পঠ্ + ণক = পঠ + অক = পাঠক। মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়ে ‘অ’ স্থানে ‘আ’ হয়েছে। যেমন- √নী + ণক = নৈ + অক-প্রথম স্বরের বৃদ্ধি) নায়ক। √গৈ + ণক = গায়ক। √লিখ্ + ণক = লেখক।
৭. য প্রত্যয়ঃ ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর ‘য’ প্রত্যয় স্থলে য-ফলা হয়। যেমন- √গম্ + য = গম্য, √লভ্ + য = লভ্য।
কৃদন্ত বিশেষণ গঠনে কতিপয় কৎ প্রত্যয়
১.ইষ্ণু প্রত্যয়ঃ √চল্ + ইষ্ণু = চলিষ্ণু। এরূপ-ক্ষুয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু।
২. উক / ঊক-প্রত্যয়ঃ কাম্ + উক = কামুক, √ভু + উক = ( ভৌ + উক ) = ভাবুক, √জাগৃ + ঊক = (জাগর + ঊক ) = জাগরুক।
৩. শানচ্ প্রত্যয়ঃ (‘শ’ ও ‘চ’ ইৎ, থাকে ‘আন’ বিকল্পে ‘মান’) ঃ √দীপ্ + শানচ্ = দীপ্যমান। এরূপ-√চল্ + শানচ্ = চলমান, √বৃধ + শানচ্ = বর্ধমান।
Share This Post