তদ্ধিত প্রত্যয় (বিস্তারিত)


বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

১. আ প্রত্যয়

ক) অবজ্ঞার্থেঃ চোর + আ = চোরা, কেষ্ট + আ = কেষ্টা।

খ) বৃহদার্থেঃ ডিঙি + আ = ডিঙ্গা ( সপ্তডিঙ্গা মধুকর)।

গ) সদৃশ অর্থেঃ বাঘ + আ = বাঘা, হাত + আ = হাতা।

ঘ) সমষ্টি অর্থে বিশ-বিলা, বাইশ-বাইলা (মাসের বাইশা > বাইশে)।

ঙ) স্বার্থেঃ জট + আ = জেটা, চোখ-চোখা, চাক-চাকা।


চ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনেঃ হাজির-হাজিরা, চাষ-চাষা।

ছ) জাত ও আগত অর্থেঃ মহিষ > ভইস-ভয়সা (ঘি), দখিন-দখিনা > দখনে (হাওয়া)।

২. আই প্রত্যয়

ক) ভাববাচক বিশেষ্য গঠনেঃ বড় + আই = বড়াই, চড়া + আই = চড়াই।

খ) আদরার্থেঃ কান + আই = কানাই, নিম + আই = নিমাই।

গ) স্ত্রী বা পুরুষবাচক শব্দের বিপরীত বোঝাতেঃ বোন + আই = বোনাই, ননদ-নদাই, জেঠা-জেঠাই (মা)।

ঘ) সমগুনবাচক বিশেষ্য গঠনেঃ মিঠা + আই = মিঠাই

ঙ) জাত অর্থঃ ঢাকা + আই = ঢাকাই (জামদানি), পাবনা-পাবনাই (শাড়ি)।

চ) বিশেষণ গঠনেঃ চোর-চোরাই (মাল), মোগল-মোগলাই(পরোটা)।

৩. আমি / আম / আমো / মি-প্রত্যয়

ক) ভাব অর্থেঃ ইতর + আমি = ইতরামি, পাগল + আমি = পাগলামি, চোর + আমি = চোরামি, বাঁদর + আমি = বাঁদরামি, ফাজিল + আমো = ফাজলামো।

খ) বৃওি (জীবিকা ) অর্থেঃ ঠক + আমো = ঠকামো ( ঠকের বৃওি বা ভাব ), ঘর + আমি = ঘরামি।

গ) নিন্দা জ্ঞাপনঃ জেঠা + আমি = জেঠামি,ছেলে + আমি = ছেলেমি।

৪. ই প্রত্যয়

ক) ভাব অর্থেঃ বাহাদুর + ই = বাহাদুরি, উমেদার-উমেদারি।

খ) বৃওি বা ব্যবসায় অর্থেঃ ডাক্তার-ডাক্তারি, মোক্তার-মোক্তারি, পোদ্দার-পোদ্দারি, ব্যাপার-ব্যাপারি, চাষ-চাষি।

গ) মালিক অর্থেঃ জামিদার-জমিদারি, দোকান-দোকানি।

ঘ) জাত, আগত বা সম্বন্ধ বোঝাতেঃ ভাগলপুর-ভাগলপুরি, মাদ্রাজ-মাদ্রাজি, রেশম-রেশমি, সরকার-সরকারি সম্বন্ধ বাচক। ৫. ইয়া > এ-প্রত্যয়

ক) তৎকালীনতা বোঝাতেঃ সেকাল + এ = সেকেলে, একাল + এ = একেলে, ভাদর + ইয়া = ভাদরিয়া > ভাদুরে (কই মাছ)।

খ) উপকরণ বোঝাতেঃ পাথর-পাথরিয়া >পাথুরে, মাটি-মেটে, বালি-বেলে।

গ) উপজীবিকা অর্থেঃ জাল-জালিয়া > জেলে, মোট-মুটে।

ঘ) নৈপুণ্য বোঝাতেঃ খুন-খুনিয়া > খুনে, দেমাক-দেমাকে, না (নৌকা)-নাইয়া > নেয়ে।

ঙ) অব্যয়জাত বিশেষণ গঠনেঃ টনটন-টনটনে (জ্ঞান), কনকন-কনকনে (শীত), গনগন-গনগনে (আগুন), চকচক-চকচকে (জুতা)।

৬. উয়া > ও-প্রত্যয়ঃ 

ক) রোগগ্রস্ত অর্থেঃ জ্বর + উয়া = জ্বরুয়া > জ্বরো। বাত + উয়া = বাতুয়া > বেতো ( ঘোড়া) খ) যুক্ত অর্থেঃ টাক-টেকো।

গ) সেই উপকরণে নির্মিতি অর্থেঃ খড়- খড়ো ( খড়োঘর)।

ঘ) জাত অর্থেঃ ধান-ধেনো।

ঙ) সংশ্লিষ্ট অর্থেঃ মাঠ-মেঠো, গাঁ-গাঁইয়া > গেঁয়ো।

চ) উপজীবিকা অর্থেঃ মাছ-মাছুয়া > মেছো।

ছ) বিশেষণ গঠনেঃ দাঁত-দেঁতো ( হাসি), ছাঁদ-ছেঁদো (কথা ) , তেল-তেলো > তেলা ( মাথা ), কুঁজ-কুঁজো। (লোক)।

৭. উ-প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে: ঢাল + উ = ঢালু, কল + উ = কালু।

৮. উক-প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে: লাজ-লাজুক, মিশ-মিশুক, মিথ্যা-মিথ্যুক।

৯. আরি/আরু-প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে: ভিখ-ভিখারি, শাঁখ-শাঁখারি, বোমা-বোমারু।

১০. আল/আলো/আলি > এল-প্রত্যয়: বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে : দাঁত-দাঁতাল, লাঠি-লাঠিয়াল > লেঠেল, তেজ-তেজাল, ধার-ধারাল, শাঁস-শাঁসাল, জমক-জমকালো, দুধ-দুধালো > দুধেল, হিম-হিমেল, চতুর –চতুরালি, ঘটক-ঘটকালি, ‘সিদ-সিঁদেল’ গাঁজা-গেঁজেল।

১১.উড়-প্রত্যয়ঃ অর্থহীনভাবে :লেজ-লেজুড়।

১২. উয়া/ওয়া > ও প্রত্যয়: সম্পর্কিত অর্থে : ঘর + ওয়া = ঘরোয়া, জল + উয়া = জলুয়া > জলো (দুধ)।

১৩. আটিয়া / টে-প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে: তাম-তামটিয়া, তামাটে, জগড়া-ঝগড়াটে, ভাড়া-ভাড়াটে, রোগা-রোগাটে।

১৪. অট > ট প্রত্যয়: স্বার্থে : ভরা-ভরাট, জমাট।

১৫. লা-প্রত্যয়ঃ

ক) বিশেষণ গঠনে: মেঘ-মেঘলা।

খ) স্বার্থে : এক-একলা,আধ-আধলা।

সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ঃ 

১.য প্রত্যয়ঃ য প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকের অন্তেস্থিত অ, আ, ই এবং ঈ এর লোপ হয়। যেমন- সাম + য = সাম্য, কবি + য = কাব্য মধুর + য = মাধূর্য, প্রাচী + য = প্রাচ্য।

ব্যতিক্রমঃ সভা + য = সভ্য ঃ(‘সাভ্য’ নয়)।

২. ইমন প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য গঠনে: নীল + ইমন = নীলিমা, মহৎ-মহিমা।

৩. ইল প্রত্যয়ঃ উপকরণজাত বিশেষণ গঠনে : পঙ্ক + ইল = পঙ্কিল, ঊর্মি + ইল = ঊর্মিল, ফেন + ইল = ফেনিল।

৪. নীন (ঈন্) প্রত্যয়ঃ তৎসম্পর্কিত অর্থে বিশেষণ গঠনে : সর্বজন + নীন = সর্বজনীন, বায়ু + নীয় = বায়বীয়, নব + নীন = নবীন।

৫. নীয় (ঈয়) প্রত্যয়ঃ বিশেষণ গঠনে : জল্ + নীয় = জলীয়, বায়ু + নীয় = বায়বীয়, বর্ষ + নীয় = বর্ষীয়।

বিশেষ নিয়মে: পর-পরকীয়, স্ব-স্বকীয়, রাজা-রাজাকীয়।

৬. বতুপ্ (বৎ) এবং মতুপ (মৎ) প্রত্যয়ঃ (প্রথমবার একবচনে যথাক্রমে ‘বান’ এবং ‘মান’ হয়) : বিশেষণ গঠনে : গুন + বতুপ্ = গুনবান, দয়া + বতুপ্ = দয়াবান। শ্রী + মতুপ্ = শ্রীমান, বুদ্ধি + মতুপ্ = বুদ্ধিমান।

৭. র-প্রত্যয়ঃ বিশেষ্য গঠনে : মধু + র = মধুর, মুখ + র = মুখর।

৮.ল-প্রত্যয়: বিশেষ্য গঠনে : শীত + ল = শীতল, বৎস + ল = বৎসল।

৯. ষ্ণ (অ) প্রত্যয়ঃ ক) অপত্য অর্থেঃ মনু + ষ্ণ = মানব, যদু + ষ্ণ = যাদব।

খ) উপাসক অর্থেঃ শিব + ষ্ণ = শৈব, জিন + ষ্ণ = জৈব, এরূপ শক্তি-শাক্ত, বুদ্ধ-বৌদ্ধ, বিষ্ণু-বৈষ্ণব। গ) ভাব অর্থেঃ শিশু + ষ্ণ = শৈশব, গুরু + ষ্ণ = গৌরব, কিশোর + ষ্ণ = কৈশোর। ঘ) সর্ম্পক বোঝাতেঃ পৃথিবী + ষ্ণ = পার্থিব। দেব + ষ্ণ = দৈব, চিত্র ( একটি নক্ষত্রের নাম) + ষ্ণ = চৈত্র। নিপাতনে সিদ্ধঃ সূর্য + ষ্ণ = সৌর (সাধারণ নিয়মে সুর + ষ্ণ (অ) = সৌর)।

১০. ষ্ণ্য (য) প্রত্যয় ক) অপত্যার্থেঃ মনু + ষ্ণ্য = মনুষ্য, জমদগ্নি + ষ্ণ্য = জামদগ্ন্য।

খ) ভাবার্থেঃ সুন্দর + ষ্ণ্য = সৌন্দর্য, শূর + ষ্ণ্য = শৌর্য । ধীর + ষ্ণ্য= ধৈর্য, কুমার + ষ্ণ্য = চৈত্র।

গ) বিশেষণ গঠনেঃ পর্বত + ষ্ণ্য = পার্বত্য, বেদ + ষ্ণ্য = বৈদ্য।

১১. ষ্ণিক (ইক) প্রত্যয় ক) দক্ষ বা বেওা অর্থেঃ সাহিত্য + ষ্ণিক = সাহিত্যিক, বেদ + ষ্ণিক = বৈদিক, বিজ্ঞান + ষ্ণিক = বৈজ্ঞানিক।  

খ) বিষয়ক অর্থেঃ সমুদ্র + ষ্ণিক = সামুদ্রিক, নগর-নাগরিক, মাস-মাসিক,ধর্ম-ধার্মিক, সমর-সামরিক, সমাজ-সামাজিক। গ) বিশেষণ গঠনেঃ হেমন্ত + ষ্ণিক = হৈমন্তিক, আকস্মাৎ + ষ্ণিক = আকস্মিক।

বিদেশি তদ্ভিত প্রত্যয়ঃ 

১.ওয়ালা > আলা ( হিন্দি):  বাড়ি-বাড়িওয়ালা ( মালিক অর্থে ), দিল্লি-দিল্লিওয়ালা (অধিবাসী অর্থে), মাছ-মাছওয়ালা (বৃওি অর্থে), দুধ-দুধওয়ালা (বৃওি অর্থে)।

২. ওয়ান > আন (হিন্দি): গাড়ি-গাড়োয়ান, দার-দারোয়ান।

৩. আনা > আনি (হিন্দি):  মুনশি-মুনশিআনা,বিবি-বিবিআনা, হিন্দু-হিন্দুয়ানি।

৪. পনা (হিন্দি):  ছেলেপনা, গিন্নি-গিন্নিপনা, বেহায়া-বেহায়াপনা।

৫. সা > সে (হিন্দি):  পানি-পানসা > পানসে, এক-একসা, কাল (কাল)-কল্সা, কালসে।

৬. গর > কর (ফারসি):  কারিগর, বাজিকর, সওদাগর।

৭। দার (ফারসি):  তাঁবেদার, খবরদার, বুটিদার, দেনাদার, চৌকিদার, পাহারাদার।

৮। বাজ (দক্ষ অর্থে ফারসি):  কলমবাজ, ধড়িবাজ, ধোঁকাবাজ, গলবাজ + ই = গলাবাজি (বিশেষ্য)।

৯। বন্দি (বন্দ্-ফারসি):  জবানবন্দি, সারিবন্দি, নজরবন্দি, কোমরবন্দ।

১০. সই : মতো অর্থেঃ জুতসই, মানানসই, চলনসই, টেকসই।

ধাতু (বিস্তারিত)
Previus
কৃৎ প্রত্যয় (বিস্তারিত)
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম