রচনাঃ দেশভ্রমন


দেশভ্রমন

ভূমিকাঃ অজানা পৃথিবীকে জানার, অচেনা পৃথিবীকে চেনার , অদেখার কৌতূহলী মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। আমাদের এ পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নদ নদী , পাহাড় পর্বত,বন বনানী, সাগর মহাসাগর প্রভৃতি । মানুষ পৃথিবীর এ সকল সৌন্দর্য অবলোকন করতে চায় , জ্ঞানর্জন করতে চায় । কিন্তু ছকবাঁধা জীবনচারণের সীমাবদ্ধতার মধ্যে জ্ঞানের পরিপূর্ণ আসে না। তা ছাড়া মানুষের মন বৈচিত্র পিপাসু।তাই দেশের যে অনাবিল ও অফুরন্ত সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা উপভোগ করার জন্য মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আর এ আগ্রহ পরিপূর্ণ করার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে দেশভ্রমন করা।

দেশভ্রমনের প্রবৃওিঃ- দেশভ্রমন প্রবৃওি মানুষের চিরন্তর । অনাদিকে থেকে এটি চলে আসছে। আদিম যুগে থেকেই মানুষ অজানাকে জানার । অদেখাকে দেখার , অধারাকে ধরার জন্য স্থান থেকে স্থানান্তরে ছুটে আসছে। তাই ইতিহাসের পাতায় আমরা দেখতে পাই জ্ঞানর্জনের জন্য অনেক আগে মিশর চীন মরক্কো গ্রিস স্পেন প্রভৃতি দেশ থেকে পর্যটন ছুটে এসেছিল আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে । আর তারই ধারাবাহিক এখনো যথারীতি দেশভ্রমন চলছে।প্রাচীন কালে পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রযুুক্তি তত উন্নত ছিল না। সমুদ্রে তখন পালের জাহাজ,চলত স্থলপথে অশ্বারোহনরোহণ কিংবা পদব্রজেই দেশভ্রমন করত।

বর্তমান দেশ ভ্রমনঃ বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। বিজ্ঞানের অবদানের আজ আকাশ পথ, স্থুল পথ ও নৌপথের বিভিন্ন দেশের যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। অর্থনৈতিক সামর্থ্য কালে থাকলে এখন যে কোনো সময় যে কোনো দেশ মাত্র কয়েক ঘন্টায় পেঁৗঁছাতে যাওয়া যায়। তাই বর্তমান কালে ভ্রমনের বন্ডি হয়েছে ব্যাপক ও প্রসারিত । দেশ ভ্রমনের উদ্দেশ্যঃ দেশভ্রমনের বিভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। কখনো দেশ দেখার উদ্দেশ্য, কখনো নতুন কিছু দেখার উদ্দেশ্য বা অজানাকে জানার এবং অদেখাকে দেখার উদ্দেশ্য মানুষ দেশভ্রমন করে থাকে। কবি কন্ঠে শুনতে পাই-

‘‘ বিপুলা এ পৃথিবীতে কতটুকু জানি । দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী । মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরির নিন্ধু মরু, কত না জানার জীব, কত না অপরিচিত তরু রয়ে গেল অগোচরে।’’

অগোচরে যা রয়ে গেল, তাকে গোচরীভূত করার জন্য দেশভ্রমন করা অত্যাবশক । দেশভ্রমনে শিক্ষণীয় দিকটা ও গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষার্থীদের জন্য দেশভ্রমন আবশ্যক। বই পড়ে বিশ্ব সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তারা চেয়ে অনেক বেশি জানা যায় ভ্রমনে করে। সুতরাং দেশভ্রমন শিক্ষার একটি উৎকৃষ্ঠ মাধ্যম। দেশভ্রমনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ ঘটে। এতে জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ ঘটে, হৃদয়ের মনের প্রসারতা বৃৃদ্বি ঘটে। চিন্তা ভাবনা দিগন্ত প্রসারী হয়। প্রখ্যাত নাট্যকার শেক্সপীয়র বলেছেন – যে যুবক আলালের ঘরের দুলাল হয়ে আরাম আয়েশের ঘরে বসে তার চিন্তা চেতনা ও সীমাবদ্ধ থাকে।

শিক্ষার পরির্পূণতা দানে দেশভ্রমনঃ দেশ ভ্রমনের মাধ্যমে শুধু আনন্দ পাওয়া যায় না, এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির শিক্ষা ও পরিপূর্ণতা হয়। স্কুল,কলেজ বিশ^বিদ্যালয় একজন ছাত্র পরোক্ষ জ্ঞানার্জন করে, কিন্তু দেশভ্রমণের মাধ্যমে সে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ অভাবে পূর্ণতা পায় না। দেশভ্রমনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক, সামাজিক, প্রত্নতান্ত্রিক ঘটনাবলি ও স্থানের সাথে জ্ঞান পিপাসুর প্রত্যক্ষ সর্ম্পক স্থাপিত্ব হয়। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের আচার আচরণ ভাষা ব্যবহা সংস্কৃতি মূল্যবোধ ভিন্ন ভিন্ন। এসব সম্পর্কে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে দেশভ্রমন বিকল্প নেই। জাতীয় ও আন্তজার্তিক সংহতি স্থাপনে দেশভ্রমনঃ সংস্কৃতি এবং আনÍজার্তিক সংহতি স্থাপনের দেশভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমান বিশে^র অনেক দেশই ভ্রমন ও পর্যটনকে শিল্প হিসেবে গ্রহন করেছে। তাই তারা এর উন্নতির জন্য যাতায়ত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পর্যটকের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। ফলে অনেক দেশের বৈদিশিক মুদ্র অর্জনের সম্ভবনায় শিল্প হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতির উন্নত হতে পারে। তা ছাড়া ,দেশভ্রমনের মাধ্যমে এক দেশের মানুষের সাথে অন্য দেশের মানুষের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে যা বিশ^ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মানব সভ্যতার সমৃদ্ধির দেশভ্রমনঃ সংস্কৃতি ও সভ্যতার আবিষ্কার গুলো সারা বিশ^ব্যাপী আদান প্রদানের মাধ্যমে মানব সভ্যতার সমৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে দেশভ্রমণের কল্যাণে । ইতিহাসে খ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাং ফা হিয়েন, কলম্বাস, ভাস্কো, দা গামা ক্যাপেন্ট কুক, মেগস্থিনিস, অতীশ দীপঙ্কর প্রমুখ নিজেদের জ্ঞানপিপাসা মেটানোর জন্য বা অজানাকে আবিষ্কার করার জন্য মরুভূমি, পাহাড় পর্বত,বন বনানি, সাগর মহাসাগর পেরিয়ে দেশভ্রমন করেছেন। তাদের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন ধ্বংস প্রাপÍ সভ্যতা ও তার সংস্কৃতি জানতে পেরেছি। ফলে আমাদের জ্ঞানভান্ডা সমৃদ্ধ হয়েছে। মানবসভ্যতার বিকশিত হয়েছে।

দেশভ্রমনের আনন্দঃ দেশভ্রমন শুধু শ্ক্ষিা ও জ্ঞানই অর্জিত হয় না । আনন্দ ও লাভ করা যায়। গতানুগতির ও একঘেরামি জীবন মানুষের পছন্দ নয়, মানুষ নতুনের স্বাদ পেতে চায়। আর এ স্বাদ পেতে চায় বলেই মান দেশভ্রমণে প্রবৃও হয় । দেশভ্রমনের মাধ্যমে বিভিন্œ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে , তাদের সংস্কৃতি সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। এ পরিচয়ের পাওয়া যায় স্বর্গীয় আনন্দ । রবীন্দ্রনাথ বলেন-

‘‘ ইচ্ছা করি মনে মনে স্বজাতি হইয়া থাকি সর্বলোক সনে দেশ দেশান্তরে।’’

মনীষীদের চোখে দেশভ্রমনঃ দেশভ্রমনের মাধ্যমে কুংস্কার, কুরাতি, মনের, সংর্কীষতা দূর হয়। তাই মহামনীষীরা দেশভ্রমণ করে জ্ঞান র্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। টমাস জেফারসন বলেছেন ‘ভ্রমনের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানী হয়।’ শেখ সাদীর মতে ভাবুক আর ভ্রমনকারী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দরবেশ।

দেশভ্রমনের ফলঃ দেশভ্রমনের মাধ্যমে শুধু মানুষের মনের আনন্দের দোলাই লাগে না বরং মনকে আলোড়িত করে নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য। তাই মানুষ দেশ ভ্রমণেনর করে সৌন্দর্যের সুধা পানের পাশাপাশি সাহিত্যকর্ম করে। বিভিন্ন দেশের সৌন্দর্য্য দেখে রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা, রম্য রচনা, উপন্যাস, প্রভৃতি। দেশভ্রমনের অভিজ্ঞতাকে অবলম্ভন করে রচিত হয়েছে দেশে বিদেশে ইউরোপে পত্র বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন রাশিয়ার চিঠি চলে মুসাফির প্রভৃতি গ্রন্থগুলো।

দেশভ্রমনের অপকারিতাঃ দেশভ্রমনের অনেক সুফল থাকা সওে¦ ও ্এর কিছুটা অপকারিতা রয়েছে। অত্যধিক ভ্রমন বা উদ্দেশ্যবিহীন ভ্রমন বর্জনীয় । অতিরিক্ত ভ্রমন স্বাথ্যহানি ঘটায়। অনেকে অতিরিক্ত দেশভ্রমন করে সেসব দেশের অপসংস্কৃতি জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিয়ে নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ঘটায়। তাই শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্য নয়- বরং মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে দেশভ্রমন করা উচিত । তাই প্রলোভন থেকে আত্মরক্ষার ক্ষমতা নেই এমন ব্যক্তির দেশভ্রমন করা উচিত নয়।

উপসংহারঃ সামান্য কিছু অপকারিতা থাকলে ও দেশভ্রমন মানব জীবনে অপরিহার্য । সৌন্দর্য,জ্ঞান, প্রেরণা, অভিজ্ঞতা, এবং বৈচিত্রের আস্বাদন দিয়ে মানুষের জীবনকে কানায় কানায় ভরে তোলে দেশভ্রমন। অতএব, যতটুকু সম্ভব দেশভ্রমণ করা বাঞ্ছনীয়। ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমন কাহিনীতে বলেছেন,

“Travelling make one know the my story of lord’s creation Travelling us self confident”

রচনাঃ ট্রেনে ভ্রমন
Previus
রচনা(প্রবন্ধ)“আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা”
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম