রচনা(প্রবন্ধ)“আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা”


আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা

ভূমিকাঃ প্রকৃতির পালাবদলে দিন আস দিন যায়। জীবন প্রবাহে ঘটে নানা ঘটনা। প্রতিনিয়ত বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় অইেশ ঘটনা। কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা চাইলে ও ভোলা যায় না। মানুষের জীবন স্মৃতিময় হয়ে থাকে।আমার জীবনের তেমনি স্মৃতময় ঘটনা ২০০৬ সালে ২৯ এপ্রিলের কাল রাত। এটি ছিল একটি ঝড়ের রাত। জীবনে অইেশ ঝড়ের কথাই শুনেছি। কিন্তু সে রাতে ঘূণিঝড়ের যে তন্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছি, এর কোনো তুলনা হয় না।

স্মরণীয় রজনীঃ ঝড়, জলোচ্ছাস এবং প্লাবনের দেশ বাংলাদেশ। এর ফলে প্রতিবছরই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বাংলাদেশের বুক, ধবংস হচ্ছে ধন-প্রাণ সব কিছু। এমনই একটি চরম দুঃখের রজনী ২০০৬ সালে ২৯ এপ্রিল । এটি আমার তথা জাতীয় জীবনের একটি বেদনার ইতিহাস, মৃত্যুও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার রক্তাক্ত হৃদয়ের আহাজারি। এদিন উপকূলীয় অঞ্চলের হাতিয়া,সন্দ্বীপ চট্রগ্রাম, চর জব্বার নোয়াখালি সমুদ্র অঞ্চলের প্রবল ঘূণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। এটি ছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।

ঝড়ের পূর্ববাসঃ বেশ কিছুদিন ধরে গোমড়া মুখে প্রকৃতি থেমে থেমে কাঁদছিল। এরপর আবহাওয়া দেখা দিল বিরুপ প্রতিক্রিয়া । কখনো আকাশ মেঘে ঢাকা ,কখনো প্রবল বৃষ্টি। ২৭ এপ্রিল আবহাওয়া দফতরের নজরে এল ঝড়ের পূর্বাভাস। রেডি ও টিভি থেকে ঘোষণা করা হলো বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপের সৃষ্টি হয়েছে।ক্রমে তা উওরে সরে যাচ্ছে এবং প্রবল ঝড়ের রুপ নিচ্ছে । ২৮ তারিখ তা আরো প্রবল রুপ ধারণা করল। বেতারের ইথারে ভেসে এল মহাবিপদ সংকেত-১০ নম্বর সিগন্যাল, সবাই সাবধান জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানকে সরে যেতে বলা হলো।

ঝড়ের বর্ণনাঃ ২০০৬ সালের ২৯ এপ্রিল সকাল থেকেই শুরু হয় একটানা বর্ষণ । ঝড়ো বাতাসসহ বর্ণণে পৃথিবীটা যেন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিল। প্রকৃতির এ অপূর্ব বিভীষণমূর্তি আগে কখনো দেখিনি। দুপুরের দিকে কিছুটা শান্ত হয়ে এল পরিবেশ। মনে হলো পৃথিবীর উপর থেকে কালো ছায়া সরে গেছে। কিন্তু মনে হয় ভয়ে দূর হচ্ছিল না। দিন শেষে সন্ধ্য আসল ঈশান কোণে কালো মেঘের আভাস ফুটে উঠে। কিছুটা সময়ের মধ্যে আকৃতির বর্ণাঢ্যতা লাভ করে দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষসহ সকল প্রাণী যেন সৃষ্টিকর্তার দয়ার জন্য উর্ধ্বমুখে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল। রাস্তায় কোনো জনমনবছিল না। রাখাল বালকেরা নিত্য দিনের মতো গোধূলিলগ্নে গুরুর পাল নিয়ে ঘরে ফিরছিল না। কদম ডালে বসে ভিজে কাক অসহায় আর্তনাদে প্রকৃতির কারুণ্য ফুটিয়ে তুলেছিল । সব মিলিয়ে চারদিকে বিষণœ এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। ধীরে ধীরে অন্ধকার আরো গাড় হয়ে আসছিল। গাছপালা রাস্তা ঘাট কিছুই দেখা যা”্ছলি না। হঠাৎ আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যায়। মানুষের সামনে এসে দাঁড়াল মহাদূযোগ। রাতের প্রথম প্রহরে সাঁ সাঁ শব্দে শুরু হলো নির্মম, নিষ্ঠুর প্রচন্ড ঝড়। ক্রমে রাতের প্রথম প্রহর গড়িয়ে এল মাঝরাত। শুরু হলো কেয়ামত আলামত। বাতাসের গতিবেগ গিয়ে দাঁড়াল ২৫০ কিলোমিটারে । চারদিকে কানফাটা বজ্রধ্বনি, আগুনের শো শো শব্দ যেন শিঙ্গাধ্বনি। তার সাথে ২০ থেকে ৪০ ফুট উচু জলোচ্ছ্বাস। ঘরে ঘরে মানুষের মরণের চিৎকার । রাক্ষুসী ঝড়ের হুঙ্কারে পৃথিবী প্রকম্পিত। কাঁচা ঘর-বাড়ি গাছপালা বিকট শব্দ করে ভেঙ্গে যাচ্ছে । আকাশব্যাপী বিদ্যুাতের চমক এবং মেঘের গর্জনে ধরণী খন্ড বিখন্ড হওয়ার উপক্রম। সমগ্র প্রভৃতি ধ্বংসের আনন্দে মও। ভয় ব্যাকুল পৃথিবী তারই পদতলে ত্রাণি ত্রাণি চিৎকার দিশেহারা।

ঝড়ের রাতে আমাদের অবস্থাঃ ঝড়ের রাতে বাব মা ভাইবোন মিলে আমরা সবাই বাড়িতেই ছিলাম। ঝড় শুরু হলে আমরা সবাই আল্লাহকে ডাকছিলাম। মা আমাদের তিন ভাই বোনকে কাছে নিয়ে বসেছিলেন।বাবা রাত ১১ টার দিকে এশবার আজান দিয়েছিল।কারণ আল্লাহর রহমতে ছাড়া ঐ সময় আমাদের বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। হঠাৎ ঝড়ের একটি ঝাপড়া এসে আমাদের ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। মা বাবা ভাই বোন আমরা সবাই ভয়ে দিশেহারা হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ পরই দেখলাম ঘরের ভেররে পানি ঢুকছে । দেখতে দেখতে পানি হাঁটু পরিমাণ হয়ে গেল। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তবু ও উপায় বাঁচাবার জন্য সবকিছু জন্য সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। ঝড়ের সাথে লড়াই করে এবং পানি সাঁতরিয়ে আমরা পাশের একটা বাসার দোতলায় আশ্রয় নিলাম।সেখানে আমাদের মতো আর ও অনেক লোক আশ্রয় নিয়েছে।

ঝড়ের অবসানঃ ভোর চারটা পযর্ন্ত চলে তান্ডবলীলা । মেঘের লীলায়, মেঘের লীলায় বজ্রের গর্জনে বাতাসের শক্তিতে যেন অকালে ভীষন কিয়ামতের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। শেষ রাতের দিকে ঝড়ের বেগ ধীরে ধীরে কমে আসে। যেন বাতাসের শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরই মুয়াজ্জিন মসজিদে আজান দেয়। এ সময় চারদিকে বাড়ি ঘর ও স্বজনহারা মানুষের ক্রন্দনে বাতাসে ভারী হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ পরই মুয়াজ্জিন মসজিদে আজান দেয়। এসময় চারদিকে বাড়ি ঘর ও স্বজনহারা মানুষের ক্রন্দনে বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতিঃ ভোরের আমরা নিচে নেমে এলাম। চারদিকে ধ্বংসস্তুপ উপর সামীহিন বিরান ভূমি। নিষ্ঠুর ঝড় কেড়েই নিয়েছে সব। মাঝে মাঝে দু একটি অর্ধ ধ্বংস দালাল এবং ডালাপালাহীন বৃক্ষ পূর্বের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। যত্রতত্র মানুষ আর গবাদি পশুর লাশ পড়ে রয়েছে । তাদেরকে সরানোর মতো কোনো লোক দেখা গেল না। গাছের মগডালে ও আটকে থাকতে দেখলাম । মানুষ আর পশুর পাখির চিৎকার পৃথিবী প্রকম্পিত । স্বজনহারা মানুষ আপন জনের খোঁজে চারদিকে ছুটাছুটি করছে। সেদিন কার ঝড়ে আমাদের গ্রামে বগু লোক মারা যায়।

উপসংহারঃ ঝড় তুফান ভয়ঙ্কর । কিন্তু সে যে নিমিষে সর্বহারা করতে পারে, তা সেবারই প্রথম উপলব্ধি করলাম। ভাবতাম মৃত্যুর রুপ না জানি কেমন। ঝড়ের সে রাতে চোখের সামনে মৃত্যুর রুপ প্রত্যক্ষ করলাম। সে রাতের কথা মনে হলে এখন ও শরীর শিউরে উঠে। হৃদয়ের বাজে ব্যথা।এ রাতের কথা আমি কোন দিন ভুলব না ভোলার নয়।

রচনাঃ দেশভ্রমন
Previus
বাক্যে পদ সংস্থাপনার ক্রম -নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম