রচনা (প্রবন্ধ)“জঙ্গিবাদ”


জঙ্গিবাদ

ভূমিকাঃ জঙ্গিবাদ বর্তমান বিশ্বের একটি আলোচিত সমস্যা। একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিক থেকে অদ্যবধি পৃথিবী ক্রমান্বয়ে অশান্ত হয়ে উঠছে। মূলত ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলার পর থেকে জঙ্গিবাদের বিষয়টি বিশ্বব্যাপি নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা পায়। এই ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি বর্তমান শান্ত পৃথিবীকেও অশান্ত করে তুলেছে। জঙ্গিবাদ নামক ভাইরাস বর্তমান বাংলাদেশে এর বিষয়বাষ্প ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুগ্ন করছে।

জঙ্গিবাদঃ কোনো রাজনৈতিক , ধর্মীয় বা আদর্শিক লক্ষ্য হাসিলের জন্যে সন্ত্রাসী বা হিংসাত্মক কর্মকান্ডই জঙ্গিবাদ। জঙ্গ’ একটি ফারসি শব্দ। এর অর্থ যুদ্ধ। আর ‘জঙ্গি’ শব্দের অর্থ যে বা যারা যুদ্ধ করে অর্থাৎ যোদ্ধা। কিন্তু বর্তমানে কতিপয় বিপথগামী মানুষের কারণে এই শব্দটি নেতিবাচক রূপ ধারণ করেছে।

জঙ্গিবাদের কারণঃ জঙ্গিবাদ উথানের নানাবিধ কারণ বিদ্যমান। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদের ধরণ ও কারণ পরিবর্তিত হচ্ছে। মূলত ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ইউরোপে জঙ্গিবাদের উথান ঘটে। এর নেতৃত্বে ছিল জার্মানির ন্যৎসি বাহিনী, যারা পুরো ইউরোপ জুড়ে তান্ডব চালায়। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ইসরায়েল রাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সূচনা করে। পশ্চিমবিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ দখলকেন্দ্রিক একশ্রেণির সরকারবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠী লালন শুরু করে। এই প্রেক্ষাপটে ইরাকম আফগানিস্তান ও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখতে পাই। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জঙ্গিবাদের কারণগুলোর মধ্যে ধর্মীয় কুসংস্কার ও দরিদ্রতাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির চরমপন্থী গোষ্ঠী ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তরুণ সমাজকে উগ্রপন্থী করে তুলছে। পাশাপাশি বিত্তবানদের ছেলে-মেয়েদের ধর্মান্ধতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে তরুণ প্রজন্মকে ভুলপথে পরিচালিত করছে। উক্ত কারণগুলোর পাশাপাশি জঙ্গিবাদ উত্থানের আরো অনেক কারণ আছে। যেমন- প্রকৃত শিক্ষার অভাব, তরুণ সমাজের হতাশা , আধুনিক ও মানবিক শিক্ষার অভাব, সামাজিক সচেতনতার অভাব, মগজ ধোলাই ব ব্রেন ওয়াশ ইত্যাদি।

জঙ্গিবাদের উদ্দেশ্যঃ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের একটি অংশ। এদের উদ্দেশ্য অবৈধভাবে চরম পন্থাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া। এ শ্রেণির উগ্রবাদী গোষ্ঠী তাদের অবৈধ কর্মকান্ডকে বৈধ করার জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চায় এবং তাদের কট্টরনীতিকে জনগণের উপর চাপানোর চেষ্টা করে। এদের মূল উদ্দেশ্য স্বাধীন বিবেকের ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্ধভাবে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা।

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদঃ ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। কিন্তু বর্তমানে ইসলামের নামেও জঙ্গিবাদের অপচর্চা চলছে। যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের আশ্রয় নিয়েছে; তারা বিপথগামী। ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে মহানবী (স.) বলেছেন, শেষ জামানায় এমন একটি গোষ্ঠী র আবির্ভাব হবে যারা বয়সে নবীন, বৃদ্ধিতে অপরিপক্ব ও নির্বোধ । তারা পবিত্র কোরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালিও অতিক্রম করবে না । তারা সৃষ্টির সেরা মানুষের কথাই বলবে। কিন্তু দ্বীন থেকে এমনভঅবে বেরিয়ে যাবে যেমন ধনুক থেকে এর তীল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। (তিরমিজি অধ্যায়-২৪)’ বিদায় হজে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না।’ সুতরাং কতিপয় ইসলঅমের শত্রু ইসলঅমকে ক্ষতি করতেই এরূপ আত্মাঘাতী হামলা চালাচ্ছে।  

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জঙ্গিবাদঃ বর্তমানে জঙ্গিবাদ একটি বৈশি^ক সমস্যা। সাম্প্রতিক কালে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা প্রমাণ করে সন্ত্রাসের কোনো দেশ নেই। কোনো সীমানা নেই। যদিও আইএস ইরাক ও হামলা, জার্মানিতে হামলা, ভারতের মুম্বাই হামলা, আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী ও সাধারণ মানুষের উপর নিয়মিত হামলা প্রশান করে ইউরোপ থেকে এশিয়া কোনো দেশই জঙ্গি হামলা থেকে নিরাপদ নয়।

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদঃ বাংলাদেশে আলোচিত জঙ্গি হামলা শুরু হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় জেএমবির সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই এর শুরু । সম্প্রতি গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়অ ঈদের জামাতে বোমা হামলা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়। তবে বর্তমান সরকার এ জঙ্গিদমনে বদ্ধপরিকর। সরকারের সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সজাগ দৃষ্টির পাশাপাশি জনগণের সহায়তায় এসব জঙ্গি দমন করে যাচ্ছে

সরকার। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় করনীয়ঃ জঙ্গিবাদ মোকবিলায় নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। কেবল সচেতনতা সৃষ্টি করে নয়, সন্তানদের সঙ্গে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। পিতা-মাতাদের তাদের সন্তানদের সময় দিতে হবে, তাদের সাথে গল্প করতে হবে। ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি আন্তরিক সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থিরা যাতে কুপথে ধাবিত না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। একাডেমিক পাঠের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ছাত্রছাত্রীদের বেশি পরিমাণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে জঙ্গি দমনে সজাগ থাকতে হবে।

উপসংহারঃ মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলো তাদের বিষবৃক্ষ বড় করে চলছে। তারা অপেক্ষা করছে শক্তি সঞ্চয় করে চূড়ান্ত আঘাত হানার। এখনই এই বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে তাদের গতিকথ রুদ্ধ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদা সজাগ দৃষ্টি আর জনসচেতনতাই পারে জঙ্গি নামক এই ভাইরাসের মূলোৎপাটন করতে । জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানে তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ।টায় এগিয়ে আসতে হবে।

রচনা(প্রবন্ধ)“ডিজিটাল বাংলাদেশে”
Previus
রচনা(প্রবন্ধ)“আমার প্রিয় গ্রন্থ/বই”
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম