রচনা (প্রবন্ধ) ”কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ”
কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকাঃ বিজ্ঞানের এক অনন্য উপহার কম্পিউটার। দিন দিন অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে বেড়েই চলেছে এর প্রয়োগের ক্ষেত্র ও প্রয়োজনীয়তা। কম্পিউটারকে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতার কথা কল্পনাও করা যায় না। মূলত পঞ্চাশের দশকে কম্পিউটারের আধুনকি প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। কম্পিউটারঃ গ্রিক শব্দ Computer থেকেই Compute শব্দের উৎপত্তি। এর আভিধানিক অর্থ গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র। কম্পিউটার দিয়ে মূলত গানিতিক যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূরক কাজ করা যায়। এ যন্ত্র মানুষের দেয়া যৌক্তিক উপাত্তের ভিত্তিতে অতি দ্রুত সঠিকভাবে কোনো কার্য সম্পাদন করতে পারে এবং নির্ভুল ফলাফল প্রদান করতে পারে।
শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ উন্নত বিশ্বে আজ শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে কম্পিউটার। বিস্ময়কর ক্ষমতাধর এ যন্ত্রটি শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্নভঅবে ব্যবহৃত হতে পারে। এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিম্নে তুলে ধরা হলো-
শিক্ষাদানেঃ কোনো একটি কাহিনী পড়া বা শোনার চেয়ে ঐ কাহিনী নিয়ে তৈরি সিনেমা বা চলচ্চিত্র মনে অনেক বেশি রেখাপাত করে। কম্পিউটারের সাহায্য শিক্ষাদান বা গ্রহনের ক্ষেত্রে এর সবকটি সুযোগ কাজে লাগানো যায়। নিচের ক্লাসে বর্ণ পরিচয়, গল্প, ইতিহাস ইত্যাদি কার্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী হয়। উপরের ক্লাসেও বিজ্ঞান, ভূগোল ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়গুলো রঙিন চিত্রে তুলে ধরে পাঠদান করা যায়। মাত্র দু’ একটি বোতাম টিপলেই যখন প্রয়োজন, তখনই দেখা-শোনা জানা যায় জন্ম বা মৃত্যুহার, রাজধানীর নাম বা শিক্ষার হার প্রভৃতি তথ্য। কাজেই প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতির চেয়ে কম্পিউটারে মাধ্যমে শিক্ষাদান যে অধিন কার্যকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তথ্য সংরক্ষণেঃ তথ্য সংরক্ষণের এক সহজ ও গুরুত্বপূণ ভান্ডার হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটারে যেকোনো তথ্য আনায়াসে নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়। চাওয়অমাত্র যেকোনো তথ্য উদ্ধারে সক্ষম কম্পিউটারে উপাত্তগুলো ইচ্ছামাফিক সাজিয়ে রাখা যায়। কম্পিউটারের স্মৃতিতে গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষিত যে কোনো তথ্যের নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কারণে দিন দিন কম্পিটারে তথ্য সংরক্ষণের অভিনত পন্থা আবিষ্কৃত হচ্ছে। ফলে ক্রমেই বেড়ে চলছে এর উপযোগিতা।
যোগাযোগেঃ কম্পিউটারের কল্যাণে সমগ্র পৃথিবী চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয় । ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক অভিনব বিপ্লব সাধন করেছে কম্পিউটার। কম্পিউটারের মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী সহজেই অন্য কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা বিশে^র কোনো শিক্ষার্থী সহজেই অন্য কোনো শিক্ষাক, শিক্ষার্থী বা বিশে^র কোনো অত্যধুনিক লাইব্রেরির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। ফলে সে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছে প্রত্যাশিত তথ্য বা সংবাদ। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ফিচার অনায়াসেই একজন শিক্ষার্থী কাজে লাগাতে পারে কম্পিউটারের কল্যাণে। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার উত্তরোত্তর খুলে দিচ্ছে নতুন দিগন্তের দ্বার।
পরীক্ষার ফলাফল তৈরি ও মূল্যায়নেঃ বর্তমান দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরীক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি কম্পিউটার নির্ভর। পরীক্ষা খাতা দেখা, ফলাফল তৈরি ও প্রকাশ করার সমুদয় গুরু দায়িত্ব কম্পিউটারের। এক্ষেত্রে কম্পিউটার দ্রুততা ও নির্ভুলতার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। ফলে শিক্ষা পদ্ধতিতে এসেছে যুগোপযোগী বৈপ্লবিক পরিবর্তণ। কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতির প্রতি আস্থা রেখেই দেশে প্রচলিত হয়েছে ফলাফল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গ্রেডিং পদ্ধতি। আর এ জটিল কাজটি সম্পাদনে কম্পিউটার ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।
উচ্চ শিক্ষায়ঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজসহ বিশে^র অনেক দেশেই আজ উচ্চশিক্ষায় কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। পোগ্রাম করা বিভিন্ন সফটওয়্যারে ব্যবহারিক বিষয়সহ প্রয়োজনীয় পাঠ আজ ঘরে বসেই কম্পিউটারের মনিটরে দেখে শুনে শেখা যায় ।
শিক্ষামূলক গবেষণায়ঃ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির পূর্বশর্ত হলো গবেষণা। এজন্য প্রতিটি দেশেই রয়েছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সমস্যা হলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিস্তারিত তথ্য সবসময় এক জায়গায় পাওয়া যায় না। এর সমাধানে এগিয়ে এসেছে কম্পিউটার। বিষয়, শিরোনামসহ প্রতিটি গবেষণামূলক প্রকাশনার সার-সংক্ষেপ কম্পিউটারে দু’এক মিনিটেই খুঁজে দেখা সম্ভব। আরো সম্ভব কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে দেশি বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্যের আন্তঃপ্রবাহ।
শিক্ষা বাহন পুস্তক প্রকাশনায়ঃ সীমার অক্ষরে কম্পোজকৃত হস্তচালিত লেটার প্রেসে যে বইটি বের করতে এক বছর লাগত, কম্পিউটারের কল্যাণে এখন তা দু’এক দিনেই বের করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে নেই কোনো অস্পষ্ট ছাপা বা ভাঙ্গা অক্ষরের বিড়ম্বনা, নেই লাইন আঁকাবাঁকা হবার ভয় বা লাইনস্পেস ছোট-বড় ঝামেলা। হাজার পৃষ্ঠার পুস্তক কম্পিউটারের স্মৃতিতে রেখে দেখা যায়, প্রয়োজনে সম্পাদনা ও পুনঃমুদ্রণও করা যায় যখন তখন। পুস্তক প্রকাশনার সূতিকাগার রাজধানী ঢাকার বাংলাবাজার আজ তাই অনেকটাই কম্পিউটার নির্ভর।
সংবাদ প্রচার ও প্রকাশনায়ঃ শিক্ষার অন্যতম হাতিয়ার সংবাদের সংবাদের প্রচার ও প্রকাশে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। টিভির প্রতিদিনকার সচিত্র সংবাদ পরিবেশনে ও সংবাদপত্রের প্রকাশনায় কম্পিউটার আজ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উপসংহারঃ জাপান, আমেরিকা, ব্রিটিন, ফ্রান্স প্রভৃতি উন্নতি বিশ্বের প্রতিটি দেশে আজ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব দেশে কম্পিউটারের সাহায্যে ইন্টারএ্যাকটিভ পদ্ধতি, নেটওর্য়াক, ইন্টারনেট বা ভার্চুয়অল রিয়েলিটি পদ্ধতিতে শিক্ষাদান ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ঘরে বসেই আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অনলাইন ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা আশা করি, সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন এ একটিমাত্র যন্ত্র ব্যবহার করেই মানুষ তার সকল প্রকার প্রয়োজন পূরন করতে পারবে।
Share This Post