সন্ধি , বাংলা ব্যাকরণ (গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা)


 সন্ধি

সন্ধিঃ  ‘সন্ধি অর্থ মিলন। পাশাপাশি দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে।

যেমন- বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়। এখানে আ+আ= ‘আ’ হয়েছে। সন্ধির উদ্দেশ্যঃ 

ক. সন্ধির উদ্দেশ্য স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা এবং খ. ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন। যেমন ‘আশা’ ও অতীত’ উচ্চারণে যে আয়াস প্রয়োজন, ‘আশাতীতক’ তার চেয়ে অল্প আয়াসে উচ্চারিত হয়। সেরূপ ‘হিম আলয়’ বলতে যেরূপ শোনা যায়, ‘হিমালয়’ তার চেয়ে সহজে উচ্চারিত এবঙ শ্রুতিমধুর। তাই যে ক্ষেত্রে আয়াসের লাঘব হয় কিন্তু ধ্বনিগত মাধুর্য রক্ষিত হয় না, সে ক্ষেত্রে সন্ধি করার নিয়ম নেই। যেমন- কচু + আদা + আলু = কচ্চাদালু হয় না অথবা কচু + আলু + আদা + কচ্চাল্বাদা হয় না।

সন্ধির প্রকারভেদঃ 

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত দুই ধরণের শব্দের সন্ধি হয়। যেমন-

ক) খাঁটি বাংলা শব্দ ও খ) তৎসম শব্দ।

ক. খাঁটি বাংলা শব্দের সন্ধিঃ  খাঁটি বাংলা শব্দের সন্ধি দুই প্রকার। যেমন-

১. স্বরসন্ধি ও ২. ব্যঞ্জনসন্ধি।

১. স্বরসন্ধিঃ  স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয, তাকে স্বরসন্ধি বলে।

যেমন : অ + এ + এ (অ লোপ), শত+এক= শতেক।

২. ব্যঞ্জনসন্ধিঃ  স্বরে আর ব্যঞ্জনে ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনের এবং ব্যঞ্জনের আর স্বরে মিলিত হযে যে সন্ধি হয, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি সমীভবনের নিয়মেই হয়ে থাকে । আর তা মূলত কথ্য রীতিতেই সীমাবদ্ধ।

তৎসম শব্দের সন্ধিঃ  বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এসব শব্দই তৎসম (তৎ=তার+সম=সমান)। তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান। এ শ্রেণির শব্দের সন্ধি সংস্কৃত ভাষার নিয়মেই সম্পাদিত হয়ে এসেছে।

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম সন্ধি তিন প্রকার। যেমন- ১. স্বরসন্ধি ২. ব্যঞ্জণসন্ধি এবং ৩. বিসর্গ সন্ধি।

১. স্বরসন্ধিঃ  স্বাধ্বনির সাথে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয, তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন- হিম + আলয় = হিমালয় ( অ + আ = আ ) সূর্য + উদয় = সূর্যোদয় ( অ + উ = ও )

২. ব্যঞ্জনসন্ধিঃ  স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর স্বরে এবং ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে মিলিত হয়ে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। এ দিক থেকে ব্যঞ্জনসন্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি খ. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি এবং গ. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি।

ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি দিক + অন্ত = দিগন্ত (ক + অ = গ) ণিচ্ + অন্ত = ণিজন্ত (চ + অ = জ)

স্বরধ্বনির সাথে ব্যঞ্জনধ্বনি এক + ছত্র = একচ্ছত্র (অ + ছ = চ্ছ) পরি + ছদ = পরিচ্ছদ (ই + ছ = চ্ছ )

ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে ব্যঞ্জনধ্বনি উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ (ত + ছ = চ্ছ) উৎ + লাস = উল্লাস ( ত + ল = ল্ল)

৩. বিসর্গ সন্ধিঃ  বিসর্গ মূলতর্ ও স্ এর সংক্ষিপ্ত রূপ । তাইর্ ও স্ এর সাথে অর্থাৎ বিসর্গের সাথে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। ক.র্ -জাত বিসর্গ ও খ. স্-জাত বিসর্গ। ক.র্ -জাত বিসর্গঃ র স্থানে যে বিসর্গ হয তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : অন্তর -অন্তর, প্রাতর -প্রাতঃ , পুনর- পুনঃ ইত্যাদি খ. স্-জাত বিসর্গঃ  স স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : নমস্-নমঃ , পুরস্-পুরঃ , শিরস্-শিরঃ ইত্যাদি।

বিসর্গ সন্ধি দুভাবে সাধিত হয় যথা- ১. বিসর্গ + স্বর ও ২. বিসর্গ + ব্যঞ্জন। ১. বিসর্গ + স্বর ততঃ + অধিক = তপোবন (অ + ঃ + ব = ও-কার) মনঃ + রম = মনোরম ( অ + ঃ + র = ও-কার)

নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধিঃ কতকগুলো সন্ধি কোনো নিয়ম অনুসারে হয় না, এগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন- গো + অক্ষ = গবাক্ষ, অন্য + অন্য = অন্যন্য ইত্যাদি

সন্ধির প্রয়োজনীয়তাঃ  সন্ধির প্রধান কাজ ভাষাকে শ্রুতিমধুর করা, উচ্চারণ সহজ করা, শব্দকে সংক্ষিত করা এবং ধ্বনিগত মাধুর্য সৃষ্টি করা। দুটি ধ্বনি বা বর্গ খুব কাছাকাছি থেকে উচ্চারিত হলে একটি ধ্বনি বা বর্ণ অন্যটিকে প্রভাবিত করে। সেক্ষেত্রে দুুটি ধ্বনি বা বর্ণ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারণ করা হলে শব্দটি কর্কশ বা শ্রুতিকটু শোনায়। কিন্তু পাশাপাশি দুটি ধ্বনি বা বর্ণকে একত্রে উচ্চারণ করলে শব্দটি শ্রুতিমধুর ও সাবলীল মনে হয়। যেমন- ‘পর + অধীন’ শব্দ দুটি আলাদা আলাদা উচ্চারণ করলে শব্দের অর্থ অস্পষ্ট এবং শ্রুতিকটু শোনায়। সেক্ষেত্রে ‘পরাধীন’ উচ্চারণ করলে শব্দটি সহজ, অর্থবোধক, স্পষ্ট এবং শ্রুতিমধুর শোনায়। সুতরাং ভাষার মাধুর্যতার জন্য সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

সন্ধির কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নিয়মঃ 

খাঁটি বাংলা শব্দের সন্ধি স্বরসন্ধিঃ  ১. সন্ধিতে দুটো সন্নিহিত স্বরের একটির লোপ হয়। যেমন- অ + এ = এ (অ লোপ), যেমন - শত + এক = শতেক। আ + আ = আ (একটি আ লোপ), যেমন - শাখাঁ + আরি - শাঁখারি। এরুপ-রুপালি। আ+উ = উ (আ লোপ) যেমন- মিথ্যা + উক = মিথ্যুক। এরূপ -হিংসুক, নিন্দুক। ই + এ = ই (এ লোপ), যেমন - কুড়ি + এক = কুড়িক । এরূপ - ধনিক , গুটিক। ২. কোনো কোনো স্থলে পাশাপাশি দুটো স্বরের শেষেরটি লোপ পায়। যেমন - যা + ইচ্ছা + তাই = যাচ্ছেতাই। এখানে (আ + ই) এর মধ্যে ‘ই’ লোপ পেয়েছে।

ব্যঞ্জনসন্ধিঃ  ১. প্রথম ধ্বনি অঘোষ এবং পরবর্তী ধ্বনি ঘোষ হলে, দুটো মিরে ঘোষ ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ সন্ধিতে ঘোষ ধ্বনির পূর্ববর্তী অঘোষ ধ্বনিও ঘোষ হয। যেমন- ছোট + দা = ছোড়দা

২. হসন্ত বা (বদ্ধ অক্ষর বিশিষ্ট) ধ্বনির পরে অন্য ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলের্ লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনি দ্বিত্ব হয। যেমন - র্আ + না = আন্না, র্ধ + না = ধন্না, র্চা + টি = চাট্টি, র্দু + ছাই = দুচ্ছাই ইত্যাদি।

৩. চ-বর্গীয় ধ্বনির আগে যদি ত-বর্গীয় ধ্বনি আসে, তাহলে ত-বর্গীয় ধ্বনি লোপ হয় এবং চ-বর্গীয় ধ্বনির দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ ত-বর্গীয় ধ্বনি ও চ-বর্গীয় ধ্বনি পাশাপাশি এলে প্রথমটি লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনিটি দ্বিত্ব হয়। যেমন- নাত + জামাই = নাজ্জামাই (ত্ + জ্ = জ্জ) বদ্ + জাত = বজ্জাত, হাত + ছানি = হাচ্ছানি ইত্যাদি।

৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এবং ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে চ ও ত এর স্থলে শ হয়। যেমন- পাঁচ + শ = পাঁশ্্শ। সাত + শ = সাশ্শ পাঁচ + সিকা = পাশ্ঁিশকা।

৫. হসন্ত ধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরের লোপ হয় না। যেমন - বোন + আই = বোনাই, চুন + আরি = চুনারি, তিল + এক = তিলেক, বার + এক = বারেক, তিন + এক + তিনেক। ৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয় । যেমন - কাঁচা + কলা = কাঁচকলা, নাতি + বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া + দৌড় = ঘোড়দৌড়, ‘ ঘোড়া + গাড়ি = ঘোড়াগাড়ি ইত্যাদি।

তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের সন্ধিঃ

স্বরসন্ধি ১. অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়; আ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন- বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় (আ + আ = আ) র্ন + অধম = নরাধম (অ+অ = আ) এরূপ – হিমাচল, প্রাণাধিক, হস্তান্তর, হিতাহিত, হিমালয়, দেবালয়, রত্নাকর, সিংহাসন, যথার্থ, আশাতীত, কথামৃত, মহার্য, কারাগার, মহাশয়, সদানন্দ ইত্যাদি।

২. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কর হয়; এ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন- শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা (অ+ই= এ) নর + ঈশ = নরেশ (অ+ঈ= এ) এরূপ - যথেষ্ট, পরমেশ, মহেশ, পূর্ণেন্দু, শ্রবণেন্দ্রিয়, স্বেচ্ছা, রমেশ, নরেন্দ্র ইত্যাদি।

৩. অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়; ও-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়। যেমন - সূর্য + উদয় = সূর্যোদয় (অ+উ = এ) যথা+উচিত = যথোচিত (আ+ঈ= এ) এরূপ গৃহোর্ধ্ব, গঙ্গোর্মি, নীলোৎপল, চলোর্মি, মহোৎসব, নবোঢ়. ফলোদয়, যথোপযুক্ত, হিতোপদেশ, পরোপকার, প্রশ্নোত্তর ইত্যাদি।

৪. অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয়ে মিয়ে ঐ-কার হয়; ঐ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন- মত+ঐক্য = মতৈক্য (অ+ঐ = ঐ) জন+এক = জনৈক (অ+এ= ঐ) এরূপ, সদৈব, মহৈশ্বর্য, হিতৈষী, অতুলৈশ্বর্য ইত্যাদি।

৫. অ-কার কিংবা আ-কাররের পর ও-কার কিংবা ঔ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়। ঔ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন- বন+ওষধি = বনৌষধি (অ+ও=ঔ) মহা+ওষধি = মহৌষধি (অ+ও = ঔ)

৬. ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ঈ-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঈ-কার হয়। দীর্ঘ ঈ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন - অতি+ইত = অতীত ( ই+ই = ঈ) পরি+ঈক্ষা = পরীক্ষা (ই+ঈ+ঈ) এরূপ- সতীশ, গিরীন্দ্র, ক্ষিতীশ, মহীন্দ্র, শ্রীশ, অতীব, রবীন্দ্র, দিল্লীশ^র ইত্যাদি।

৭. ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই ও ঈ ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণ থাকলে ই বা ঈ ‘য’ (্য) ফলা হয়। য-ফলা লেখার সময় পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে লেখা হয়। যেমন - অতি+অন্ত = অত্যন্ত ( ই+অ = য+অ ) ইতি + আদি = ইত্যাদি (ই+উ = য+উ) প্রতি+এক = প্রত্যেক (ই+এ= য+এ) প্রতি+ঊষ = প্রত্যুষ (ই+উ = য+উ) এরূপ-অত্যুক্তি, নদ্যম্বু, প্রত্যহ, অত্যধিক, গত্যন্তর, প্রত্যাশা, প্রত্যাবর্তন, আদ্যন্ত, যদ্যপি, পর্যন্ত, অত্যাশ্চর্য, প্রত্যুপকার ইত্যাদি।

৮. উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ-কার হয়, ঊ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে যুক্ত হয়। যেমন- উ+উ = ঊ মধু+উদ্যান = মরূদ্যান। উ+ঊ = ঊ বহু+ঊর্ধ্বা = বহুর্ধ্ব। ঊ+উ = ঊ বধু+উৎসব = বহুৎসব। ঊ+ঊ = ঊ ভূ+ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব।

৯. উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার ও ঊ-কার ভিন্ন অন্য স্বরবর্ণ থাকলে উ বা ঊ ‘ব-ফলা’ হয়; ব-ফলা পরবর্তী বর্ণের সাথে লেখা হয়। যেমন- সু+অল্প = স্বল্প (উ+অ = ব+অ) তনু+ঈ =তন্বী (উ+ঈ = ব+ঈ) অনু+এষণ = অন্বেষণ (উ+এ = ব+এ) সু+আগত = স্বাগত (উ+আ = ব+আ)

১০. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ‘অর’ হয়। ‘অর’ রেফ (র্ ) রূপে পরবর্তী বর্ণের সাথে লেখা হয়। যেমন- দেব+ঋষি = দেবর্ষি (অ+ঋ = অর) মহা+ঋষি = মহর্ষি (আ+ঋ = অর) এরূপ অধমর্ণ, উত্তমর্ণ, সপ্তর্ষ, রাজর্ষি ইত্যাদি ১১.অ-কার কিংবা আ-কারের পর ‘ঋত’ শব্দ থাকলে অ, আ+ঋ উভয়ে মিলে ‘আর’ হয় এবং বানানে পূর্ববর্তী বর্ণে আ ও পরবর্তী বর্ণে রেফ লেখা হয় । যেমন- শীত+ঋত = শীতার্ত (অ+ঋ = আর) ভয়+ঋত = ভয়ার্ত (অ=ঋ = আর) তৃষ্ণা+ঋত = তৃষ্ণার্ত (আ+ঋ = আর) ক্ষুধা+ঋত = ক্ষুধার্ত (আ+ঋ = আর)

১২. ঋ-কারের পর ঋ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ‘ঋ’ স্থানে ‘র’ ফলারুপে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন- পিতৃ+আলয় = পিত্রালয়। পিতৃ+আদেশ = পিত্রাদেশ

১৩. এ, ঐ, ও, ঔ- কারের পর এ, ঐ স্থানে যথাক্রমে অয়, আয় এবং ও, ঐ স্থানে যথাক্রমে অব্ ও আব্ হয়। যেমন - এ + অ = অয়্ + অ নে+অন = নয়ন শে + অন = শয়ন। ঐ + অ = আয়্ + অ নৈ+অক = নয়ক গৈ + অক = গায়ক। ও + অ = অব্ + অ পো+অন = পবন লো + আন = লবন। ঔ + অ = আব্ + অ পৌ + অক = পাবক। ও + আ = অব্+আ গো + আদি = গবাদি। ও + এ = অব্+এ গো + এষণা = গবেষণা। ও + ই = অব্ + ই পো + ইত্র = পবিত্র। ঔ + ই = আব্+ই নৌ + ইক = নাবিক। ঔ+উ = আব্+উ ভৌ + উক = ভাবুক।

১৪. কতকগুলো নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি কুল + অটা = কুলটা (কুলটা অন্য + অন্য = অন্যান্য নয়) মার্ত + অন্ড = মার্তন্ড গো + অক্ষ = গবাক্ষ (গবক্ষ নয়) শুদ্ধ + ওদন = শুদ্ধোদন। প্র + ঊঢ় = পৌঢ় (প্রোঢ় নয়)

ব্যঞ্জনসন্ধি ১. ক্, চ্, ট্, ত্, প্ - এর পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ্, জ্, ড্ (ডু), দ্, ব্, হয়। পরবর্তী স্বরধ্বনিটি পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন- ক্ + অ = গ দিক্ + অন্ত = দিগন্ত। চ্ + অ = জ ণিচ্ + অন্ত = নিজান্ত। ট্ + আ = ড় ষট + আনন = ষড়ানন। ত্ + অ = দ তৎ + অবধি = তদবধি। প্ + অ = ব সুপ্ + অন্ত = সুবন্ত। এরূপ বাগীশ , তদন্ত, বাগাড়ম্বর, বাগধারা, বাগ্্দত্তা, কৃদন্ত, সদানন্দ, সদুপায়, সদুপদেশ, জগদিন্দ্র ইত্যাদি।

২. স্বরধ্বনির পর ‘ছ’ থাকলে উক্ত ব্যঞ্জনধ্বনটি দ্বিত্ব (চ্ছ) হয়। যথা অ + ছ = চ্ছ এক + ছত্র = একচ্ছত্র। আ + ছ = চ্ছ কথা + ছলে = কথাচ্ছলে। ই + ছ = চ্ছ পরি + ছদ = পরিচ্ছদ। এরূপ-মুখাচ্ছবি, বিচ্ছেদ, পরিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্ন, অঙ্গচ্ছেদ, আলোকচ্ছটা, প্রতিচ্ছবি, প্রচ্ছদ, আচ্ছাদন, বৃক্ষচ্ছায়া, স্বচ্ছন্দে, অনুচ্ছেদ প্রভৃতি।

৩. ত্ কিংবা দ্-এর পর চ্ কিংবা ছ্ থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে চ্ হয়। যেমন - উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ (ত+ছ = চ্ছ) সৎ + চরিত্র = সচ্চরিত্র (ত+চ = চ্চ) তদ + ছবি = তচ্ছবি (দ+ছ = চ্ছ) উৎ + চারণ = উচ্চারণ (ত+চ = চ্চ)

৪. ত্ কিংবা দ্-এর পর জ্ কিংবা ঝ্ থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে জ্ হয়। যেমন- উৎ + জ¦ল = উজ্জ্বল (ত+জ = জ্জ) সৎ + জন = সজ্জন (ত+জ = জ্জ) কুৎ + ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা (ত+ঝ + জ্ঝ)

৫. ভ্ কিংবা দ্ এর পর ড্ থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে ড্ হয়। যেমন - উৎ + ডীন = উড্ডীন (ত + ড = ড্ড)

৬. ত্ কিংবা দ্-এর পর ল্ থাকলে ত্ ও দ্ স্থানে ল্ হয়। যেমন - উৎ + লেখ = উল্লেখ (ত + ল = ল্ল) উৎ + লাস = উল্লাস (ত + ল = ল্ল)

৭. ত্ কিংবা দ্-এর পর হ্ থাকলে ত্ বা দ্ এর পরবর্তী দ্ এবং হ্ স্থানে ধ্ হয়। যেমন - উৎ + হার = উদ্ধান (ত+হ = দ+ধ = দ্ধ) পদ + হতি = পদ্ধতি (দ+হ = দ+ধ = দ্ধ)

৮. ম্-এর পর অন্তঃস্থ ধ্বনি য, র, ল, ব কিংবা শ, য, ল, হ থাকলে ম্ স্থলে অনুস্বার (ং) হয়। যেমন - সম্ + যম = সংযম, সম্ + বাদ = সংবাদ, সম্ + লাপ = সংলাপ, সম্ + শয় = সংশয়, সম্ + হার = সংহার, সম্ + সার = সংসার,

৯. চ্ ও জ্ - এর পরে নাসিক্য ধ্বনি তালব্য হয়। যেমন - চ্ + ন = চ + ঞ, যাচ্ + না = যাচ্্ঞা, রাজ্ + নী = রাজ্ঞী জ্ + ন = জ + ঞ, যজ্ + ন = যঞ্জ,

১০. য- এর পরে ত্ বা থ্ থাকলে, যথাক্রমে ত্ ও থ্ স্থানে ট ও ঠ হয়। যেমন- কৃষ্ + তি = কৃষ্টি, ষষ্ + থ = ষষ্ঠ।

১১. বিশেষ নিয়মে সাধিত কতগুলো সন্ধি: উৎ + স্থান = উত্থান, সম্ + কার = সংস্কার, উৎ + স্থাপন = উত্থাপন সম্ + কৃত = সংস্কৃত, পরি + কার = পরিষ্কার। এরূপ সংস্কৃতি, পরিস্কৃত ইত্যাদি।

১২. কতগুলো সন্ধি নিপাতনে সিদ্ধ হয়। যেমন- উৎ + চর্য = আশ্চর্য, গো + পদ = গোষ্পদ, বন + পতি = বনস্পতি, বৃহৎ + পতি = বৃহস্পতি, তৎ + কার = তস্কর, পর + পর = পরস্পর, পতৎ + অঞ্জলি + পতঞ্জলি ইত্যাদি।

বিসর্গ সন্ধি ( তৎসম শব্দের) ১. অ-কারের পররিস্থত স্-জাত বিসর্গের পর ঘোষ অল্পপ্রাণ ও ঘোষ মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি নাসিক্যধ্বনি কিংবা অন্তস্থ য, অন্তস্থ ব, র, ল, হ থাকলে অ-করে ও স্-জাত বিসর্গ উভয় স্থলে ও-কার হয়। যেমন- তিরঃ + ধান = তিরোধান, মনঃ + রম = মনোরম, মনঃ + হর = মনোহর, তপঃ + নব = তপোবন ইত্যাদি।

২. অ-কারের পরস্থিতর্ -জাত বিসর্গের পর উপর্যুক্ত ধ্বনিসমূহের কোনোটি থাকলে বিসর্গ স্থানে ‘র’ হয়। যেমন- অন্তঃ + গত = অন্তর্গত, অন্তঃ + ধান = অন্তর্ধান, পুণঃ + আয় = পুনরায় পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত। অহঃ + অহ = অহরহ। এরূপ- পুনর্জন্ম, পুনর্বার, প্রাতরুত্থান, অন্তর্ভুক্ত, পুনরপি, অন্তর্বর্তী ইত্যাদি।

৩. অ ও আ ভিন্ন অন্য স্বরের পরে বিসর্গ থাকলে এবং তার সঙ্গে অ, আ বর্গীয় ঘোষ অল্পপ্রাণ ও ঘোষ মহাপ্রাণ নাসিক্য ধ্বনি কিংবা য, র, ল, ব, হ, এর সন্ধি হলে বিসর্গ স্থানে ‘র’ । যেমন- নিঃ + আকার = নিরাকার আশীঃ + বাদ = আর্শীবাদ দুঃ + যোগ = দুর্যোগ ইত্যাদি। এরূপ-নিরাকরণ, জ্যোতির্ময়, প্রাদুর্ভাব, নির্জন, বহির্গত, দুর্লোভ, দুরন্ত ইত্যাদি। ব্যতিক্রম ঃ ই কিংবা উ ধ্বনির পরের বিসর্গের সঙ্গে ‘র’ এর সন্ধি হলে বিসর্গের লোপ হয় ও বিসর্গের পূর্ববর্তী হ্রাস্ব স্বর দীর্ঘ হয়। যেমন- নিঃ + রব = নীরব, নিঃ + রস = নীরস ইত্যাদি।

৪. বিসর্গের পর অঘোষ অল্পপ্রাণ কিংবা মহাপ্রাণ তালব্য ব্যঞ্জন থাকলে বিসর্গের স্থলে বিসর্গের স্থলে তালব্য শিস ধ্বনি হয়, অঘোষ অল্পপ্রাণ কিংবা অঘোষ মহাপ্রাণ মুর্ধন্য ব্যঞ্জন থাকলে বিসর্গ স্থলে মূর্ধন্য শিস ধ্বনি হয়, অঘোষ অল্পপ্রাণ কিংবা অঘোষ মহাপ্রাণ দন্ত্য ব্যঞ্জনের স্থলে দন্ত্য শিস ধ্বনি হয়। যেমন – ঃ + চ/ছ = শ + চ/ছ নিঃ + চয় = নিশ্চয়, শিরঃ + ছেদ = শিরñেদ। ঃ + ট/ঠ = ষ + ট/ঠ ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার, নিঃ + ঠুক = নিষ্ঠুর। ঃ + ত/থ = স + ত/থ দুঃ + তর = দুস্তর, দুঃ + ঠুক = দুস্থ।

৫. অঘোষ অল্পপ্রাণ ও অঘোষ মহপপ্রাণ কন্ঠ্য কিংবা ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন ( ক, খ, প, ফ) পরে থাকলে অ বা আ ধ্বনির পরস্থিত বিসর্গ স্থলে অঘোষ দন্ত্য শিস ধ্বনি (স্) হয় এবং অ বা আ ব্যতীত অন্য স্বরধ্বনির পরস্থিত বিসর্গ স্থলে অঘোষ মূর্ধণ্য শিস ধ্বনি (ষ) হয়। যেমন- অ - এর পরে বিসর্গ ঃ + ক = স্ + ক নমঃ + কার = নমস্কার। অ - এর পরে বিসর্গ ঃ + খ = স্ + খ পদঃ + খলন = পদস্খলন। ই - এর পরে বিসর্গ ঃ + ক = ষ + ক নিঃ + কর = নিষ্কর। উ - এর পরে বিসর্গ ঃ + ক = ষ + ক দুঃ + কর = দুস্কর। এরূপ - পুরস্কার, মনস্কামনা, তিরস্কার, চুতষ্পদ, নিষ্ফল, নিষ্পাপ, দুষ্প্রাপ্য, বহিস্কৃত, দুস্কৃতি, আবিষ্কার, চতুস্কোণ, বাচস্পতি, ভাস্কার ইত্যাদি।

৬. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ হয় না। যেমন- প্রাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল, মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট, শিরঃ পীড়া = শিরঃপীড়া। ৭. যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি স্ত, স্থ কিংবা স্প পরে থাকলে পূর্ববর্তী বিসর্গ অবিকৃত থাকে অথবা লোপ পায় যেমন- নিঃ + স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ কিংবা নিস্তব্ধ। দুঃ + স্থ = দুঃস্থ কিংবা দুস্থ। নিঃ + স্পন্দ = নিঃস্পন্দ কিংবা নিস্পন্দ। কয়েকটি বিশেষ বিসর্গ সন্ধি বাচঃ + পতি = বাচস্পতি। ভাঃ + কর = ভাস্কর, অহঃ + নিশ = অহর্নিশ, অহঃ + অহ = অহরহ ইত্যাদি

বাংলা রচনাঃ বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার
Previus
ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধান , বাংলা ব্যাকরণ (গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা)
Next

Share This Post


Suggestion or Complain

সংবাদ শিরোনাম