ভাবসম্প্রসারণ “পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন আপন অভাব ক্ষোভ থাকে কতক্ষণ?”
পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন, আপন অভাব ক্ষোভ থাকে কতক্ষণ?
মূলভাব: কোনো মানুষই চরম ভাবে তুষ্ট নয়। সকলের মনে অভাববোধের সীমাহীন ক্ষোভ বিদ্যমান। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেকেই আছেন যারা তুলনামূলকভাবে অধিক বঞ্চনার জীবনযাপন করে। তাদের অপ্রাপ্তির দিকে নজর দিলেই নিজের অভাবের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের আকাক্সক্ষার শেষ ন্ইে। তার চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। একটি অভাবের পরিতৃপ্তি নতুন অভাবের জন্ম দেয়। সেই অভাব পূর্ণ হলেও তৃপ্ত হয় না মানুষের মন। সব সময়েই অতুষ্টি আর অপ্রাপ্তি জ্বালা মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সে সব পেয়েছির দলে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। এ অসম্ভব প্রচেষ্টা মানুষের মনে চরম ক্ষোভ ও যন্ত্রনার জন্ম দেয়। আর এ অপ্রত্যশিত প্রচেষ্টা মানুষের সুকুমার বৃত্তিসমুহকে ধ্বংস করে তাকে স্বার্থপরতার দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিযিক্ত করে। কিন্তু এ অব¯থা কারো কাম্য নয়। তা থেকে মুক্তি পেতে হলে তুলনামুলকভাবে যারা দরিদ্র, বঞ্চিত জীবনযাপন করে তাদের দিকে নজর দিতে হবে। নিজের অভাবের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে, অপরের বঞ্চনার দিকে তাকালে নিজের অপরিতৃপ্তির ক্ষোভ অনেকাংশে হ্রাস পায়। পায়ে জুতা না থাকলে দুঃখ হওয়া স্বাভাবিক; কিন্তু পা নেই এমন লোকের কথা চিন্তা করলে জুতা না থাকার ক্ষোভ ঘুচে যেতে বাধ্য। দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করেও যদি একজন অন্যের তুলনায় কতটা সুখে রয়েছে তা বিবেচনা করে তবে তার মনে আর দুঃখ থাকে না। পরের দুঃখ ও অপ্রাপ্তির কথা চিন্তা করলে নিজেকে অধিকতর সুখী মনে হয়। তাতে অপ্রাপ্তির ক্ষোভ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মন্তব্য: তৃপ্ত জীবনযাপন করতে হলে আত্মতুষ্টির কোনো বিকল্প নেই। আর আত্মতুষ্টি লাভ ও অপ্রাপ্তির জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে হলে অন্যের অপ্রাপ্তিকে বিবেচনায় আনতে হবে।
Previus
Next
Share This Post