ভাবসম্প্রসারণ “পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে, মানুষ ইহতে দাও তোমার সন্তানে।”
পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে, মানুষ ইহতে দাও তোমার সন্তানে।
মূলভাব: মানবজীবন অনবিল সুখের স্থায়ী ভান্ডান নয়। সুখের পাশাপাশি দুঃখও থাকে। তাই মানুষকে সর্বাবস্থায় প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রতিটি মানব সন্তনই মাতাপিতার স্নেহ ছায়ার ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে। কোনো মাতাপিতাই সন্তানকে কাঁটার আঘাত সহ্য করতে দিতে চায় না। কিন্তু এরকম মনোভঙ্গি সব সময় সমীচীন নয়। সম্প্রসারিত ভাব: ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়েই মানুষের নিরন্তর পথ চলা। জন্মের পর থেকেই মানুষ শিখতে শুরু করে। পরিবারই মানুষের শিক্ষা অর্জনের সূতিকাগার । প্রতিটি সন্তানই তার মাতাপিতার অনেক যত্নলব্ধ সম্পদ। কোনো পিতামাতাই সন্তানকে কষ্ট কিংবা বাধার সম্মুখীন হতে দিতে চায় না। কিন্তু দুঃখ কষ্ট ব্যতিরেকে কোনো শিশুই শুধু সুখের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে না। প্রতিটি মানুষকে সময়ের বিবর্তনে পরিণত বয়সে এসে সংগ্রামশীল মানবজীবনের জীবনযুদ্ধে অংশ নিতে হয়। তাই প্রতিটি মানুষকে কেবল ভালো দিকে প্রতি আকৃষ্ট হলেই চলবে না, বরং পাশাপাশি এ নেতিবাচক দিককেও গ্রহণ করতে হবে। রোদে পুড়লে কিংবা বৃষ্টিতে ভেজলে কী ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় তা একজন মানুষ তখনই বুঝতে পারে, যখন সে রোদে পুড়লে বা বৃষ্টিতে ভেজে। ঘরের চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ থেকে অপরের কষ্ট উপলব্ধি করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই পিতামাতাকে তাদের সন্তানকে সব ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। নিজে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে শিখতে হবে। কেননা মাতাপিতা যখন থাকবেন না তখন নিজেদেরকেই সকল বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হবে। মন্দ পথে পা দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হলেই সেঅভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণে নিজের চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগাতে পারবে। আর প্রতিটি মানুষের এ বৈশিষ্ট্যই তার চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে দিয়েই মানুষ খুঁজে পায় মানবজীবনের প্রকৃত সাথৃকতা। তাই প্রত্যেক বাবামাকে তাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা পাপে পুণ্যে দুঃখে সুখে উত্থানে পতনে নিজেদেরকে তৈরি করতে পারে। কবির ভাষায়-
“পদে পদে ছোট ছোট নিষেধের ডোরে, বেঁধে বেঁধে রাখিও না ভালো ছেলে করে।”
মানুষ স্বভাবতই কৌতুহলী। অজানাকে জানার এবং নিষেধকে লঙ্ঘন করার দুর্নিবার আকর্ষণ মানুষ কিছুতেই পরিহার করতে পারে না। তাই ফুলের সাথে যেমন কাঁটার আঘাত সহ্য করতে হয়, তেমনি ভালোর সাথে মন্দকেও গ্রহনের মনমানিকতা তৈরি করতে হবে। এভাবেই মানব সন্তন প্রকৃত মানুষ হওয়ার গুনাবলি অর্জন করে। মন্তব্য: সংগ্রামমুখর মানবজীতবনে নিরবচ্ছিন্ন সুখভোগ কারও লক্ষ্য হতে পারে না। প্রকৃত মানুষ সেই যে ভালো-মন্দ,ঔচিত্য-অনৌচিত্যের মধ্য থেকে নিজের জন্য বাঞ্ছিত পথটি খুঁজে নিতে পারে। এ জন্য প্রতিটি মানুষকে মুখোমুখি হতে হবে পর¯পর বৈপরীত্যে ভরা ও বিশ্ব সংসারের।Previus
Next
Share This Post