ভাবসম্প্রসারণ “বেঁচেও মরে যদি মানুষ দোষে, মরেও বাঁচে যদি মানুষ ঘোষে।”
বেঁচেও মরে যদি মানুষ দোষে, মরেও বাঁচে যদি মানুষ ঘোষে।
মূলভাব: মহৎ কাজের মাধ্যমে মানুষ মৃত্যুর পরও মানবহৃদয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু মন্দ কাজ করার ফলে মানুষ মৃতের ন্যায় বেঁচে থাকে। সম্প্রসারিত ভাব: জন্ম-মৃত্যু মানব জীবনের শাশ্বত বাস্তবতা। ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের যারা বিবেক বুদ্ধির উন্মেষ ঘটিয়ে মনুষ্যত্বের ফুল বাগানে চরিত্রের সব সুকুমার বৃত্তির বীজবপনে যত্নবান হয়, বিধির অমোঘ বিধানে এরা মৃত্যুবরণ করলেও মানবের মনের কাবায় স্বীয় প্রভ্যায় এরা মৃত্যুঞ্জয়। এরূপ কর্মমুখর মানুষ তাদের সৎকাজের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের উপকার করে মানব হৃদয়ে চিরদিন বিরাজ করে। তাঁদের সুকীর্তির স্মরণে মানব হৃদয় শ্রদ্ধার নত হয়। তাঁদেরই তরে কবির জয়গান: “এনছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।” অন্যদিকে, যারা বিবেকবুদ্ধির সমাধি’ পরে পাশবিকতার বিষবাষ্পে বিলাসী জিন্দেগির ভিত রচনা করে সুখের সন্ধানে সচেষ্ট হয়, যারা স্বীয় সুখালয় রচনায় প্রয়োজনে অন্যের সুখের জলঞ্জলি দেয়, যাদের শান্তির সোপান রচনায় অন্যের সুখের ঘরে জ্বলে উঠে অশান্তির আগুন, তারা মানব জাতির কলঙ্ক। তাদের মৃত্যুতে জনজীবনে ফিরে আসে স্বস্তি, মানুষ পায় শান্তি। আর তাদের বেঁচে থাকা যেহেতু সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায়, সমাজে সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খলার ঘূর্ণিঝড়, সেহেতু মানবসমাজ তাদের মৃত্যু চায় নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই। আর তাই এ প্রকৃতির মানুষ বেঁচেও মানব হৃদয়ে মৃত। জগতে এ জাতীয় মানুষ কাম্য হতে পারে না। মন্তব্য: মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা আর মহৎ কাজের বন্দনায় কবির সাথে আমরাও একমত:
“মহৎ কাজে মানুষ বাঁচে মরণেরও পরে মন্দ কাজে মানুষ মরে জীবনেরই তরে।”
Share This Post