ফেসবুক ও আধুনিক জীবন - রচনা -Gazi Online School
ফেসবুক ও আধুনিক জীবন
ভূমিকাঃ বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এ যুগের উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে বসবাস করার পাশাপাশি প্রতিনিয়তই একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। সেই কাজটি অত্যন্ত সহজতর করার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অগ্রপথিক হচ্ছে Facebook.
ইতিহাসঃ 2004 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক নামের নেটওয়ার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালে এটি শুধু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত ছিল। পরে এ ওয়েবসাইটটি অন্যান্য অঞ্চল ও বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে সমগ্র বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রভাব : ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখে চলেছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে দিচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুক জাদুতে দূর হয়েছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। ফেসবুক মাধ্যমের সদস্যরা নির্দিষ্ট কাউকে বন্ধু হিসেবে বেছে নেওয়া যায়। আবার কারও বন্ধুত্বের আহ্বান ফিরিয়েও দেওয়া যায়।
সংবাদের ক্ষেত্রে প্রভাব : বর্তমানে সংবাদের জন্য সংবাদপত্র, বেতার ও টেলিভিশনের ওপর নির্ভরতা আগের তুলনায় অনেকগুণে কমেছে। ২০১১ সালে চবি Research data থেকে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০ শতাংশ লোক সংবাদের জন্য অনলাইনের ওপর নির্ভর করে এবং এদের মধ্যে ৬০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদ জেনে যায়। সিএনএন পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, তিন-চর্তুথাংশ মার্কিন নাগরিক ই-মেইল অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদ পেয়ে থাকে।
কিশোর-কিশোরীদের ওপর প্রভাব : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা ক্ষতিকর দিক হল কিশোর-কিশোরীদের কাছে পর্নোসাইট উন্মুক্ত হয়ে পড়া। সহজেই তারা বয়স্কদের সাইটে ঢুকতে পারে যা তাদের অপরিপক্ব মানসিকতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সাংবাদিক সাঈদ সরকার এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে তরুণ ও কিশোর সমাজের। শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য কায়িক শ্রমের গুরুত্ব রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার। কিন্তু ফেসবুকের মায়ায় প্রায়ই আটকে পড়ছে তরুণ ও কিশোর সমাজ। লেখাপড়া, কোচিং, প্রাইভেট, টিভি দেখা ইত্যাদি কারণে সময় বের করা এমনিতেই সম্ভব হয় না। তারপরও যেটুকু পাওয়া যায় তাও কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
আসক্তি তৈরি করা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়। অধিক সময় ব্যয় হয়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং যৌন আলাপচারিতা বেশি হয়। এসব কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের বিকারগ্রস্ত করে তোলে।
চাকরি ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব : কোনো তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করলে চাকরি ক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ২০১৩ সালে ৬টি দেশের ১৭ হাজার তরুণের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ১৬-৩৪ বছর বয়সী তরুণের ১০ জনের মধ্যে ১ জন চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য।
;">কলেজে ভর্তি: ছাত্রছাত্রীদের ফেসবুক কমেন্ট, পোস্টিং কোনো কলেজের নীতিমালা বা মূল্যবোধের পরিপন্থী হলে ওই কলেজে সে ভর্তির সুযোগ পাবে না। আগে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর, রিপোর্ট কার্ড, পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম ইত্যাদি বিবেচনা করা হতো ভর্তির সময়। এখন সময় বদলেছে, পশ্চিমা বিশ্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র ভর্তির সময় ভর্তিচ্ছুদের ফেসবুক প্রোফাইল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমাদের দেশেও অদূর ভবিষ্যতে এরকম ভর্তি পদ্ধতি শুরু হবে আশা করা যায়।
বিনোদন : বিনোদন লাভের জন্য অনেক শিক্ষার্থী ফেসবুক ব্যবহার করে। বিনোদনের নামে কেউ যেন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরা কী পরিমাণ সময় ব্যয় করছে ফেসবুকে,পর্নোসাইট ভিজিট করছে কিনা, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করবে।
উপসংহারঃ বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেটি পৃথিবীর দূরত্বকে হাতের মুঠোয় আনতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এর নেতিবাচক দিকগুলো সচেতনতার সাথে পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও তার জনগণ উভয়ই উপকৃত হবে।
Previus
Next
Share This Post