বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প : সমস্যা ও সম্ভাবনা - রচনা
বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প : সমস্যা ও সম্ভাবনা
ভূমিকাঃ সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষ দেশে দেশে ভ্রমণ করে আসছে। পৃথিবী দেখার দুর্নিবার নেশায় মানুষ সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ মহাসমূ্দ্র পাড়ি দিয়ে পোঁছেছে অজানা অচিন দেশে। মানুষের এই দুৰ্বিার ভ্রমণাকাতা থেকেই পর্যটনশিল্পের উৎপত্তি। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পর্যটনের রূপ ও প্রকৃতিতে এসেছে অভাবিত পরিবর্তন। পর্যটন এখন শুধু কোনো ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দেশভ্রমণ নয়, বরং সমগ্র মানবগোষ্ঠীর জন্য একটি বিশ্বজনীন শখ ও নেশা। পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে এবং 2017 সালে জেলা ব্র্যার্ন্ডি কার্যক্রম গ্রহণ করে। যাতে পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
পর্যটন কি : পর্যটন একাধারে একটি দৃষ্টিভঙ্গি এবং কর্মকাণ্ড। পর্যটনের দৃষ্টিভঙ্গি অনোপার্জনমূলক এবং এর কর্মকাণ্ড নিয়ত স্থানান্তরী ও অস্থায়ী অবস্থানমূলক। AIEST (অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্টস ইন সায়েন্টিফিক ট্যুরিজম)-এর মতে, কোনো। উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত নয় এবং স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে না এমন ব্যক্তির ভ্রমণ এবং কোথাও থাকা থেকে উৎসারিত প্রপঞ্চ ও সম্পর্কের সমষ্টি হচ্ছে পর্যটন। পথটনকে এভাবেও সংজ্ঞায়িত করা হয় : '... activities of human being travelling to and staying in places outside their usual environment for the purpose of education, experience, enrichment and enjoyment. সংক্ষেপে, জাগতিক সৃষ্টি দশনাথে ব্যক্তির অনোপার্জনমূলক স্থানান্তর, অস্থায়ী অবস্থান এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ক্রিয়াদিকে পর্যটন বলা যায়।
বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের আকর্ষণ : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। অপরিমেয় সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে এই দেশে। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যিক ও আত্মিক সকল সম্পদেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ। তাই যুগ যুগ ধরে বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশ চিরসবুজে ঘেরা এক স্বপ্নের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন, সোনারগাঁও, কক্সবাজার, কাপ্তাই, কুয়াকাটা, রাঙামাটি, ময়নামতি, পাহাড়পুরসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানসমূহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ । দারিদ্র বিমোচনে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পর্যটনশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটনশিল্পের অবদান : বর্তমানে বিশ্বের একক বৃহত্তম শিল্প এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান সৃষ্টিকারী অন্যতম খাত পর্যটনশিল্প। বিশ্বের গড় উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ খাত বর্তমানে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের যোগান দিচ্ছে, যা বিশ্বের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৫.৫%।
বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প বিকাশের প্রেক্ষাপট : পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এখানে অনেক উপকরণ থাকলেও স্বাধীনতা-পূর্বকালে এ ব্যাপারে কার্যত কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। স্বাধীনতার পর পর্যটনের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং এর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন' নামে একটি জাতীয় পর্যটন সংস্থা গঠিত হয়।
জাতীয় পর্যটন নীতিমালা : ১৯৯২ সালে প্রথম পর্যটন সম্পর্কিত জাতীয় নীতিমালায় বর্ণিত দেশের পর্যটনের উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
১. বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো।
২. জনসাধারণের মধ্যে পর্যটনের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি করা ও তাদের জন্য অল্প খরচে পর্যটন সুবিধা সৃষ্টি।
৩. দেশের পর্যটন সম্পদের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন।।
৪. বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলা।
৫. বেসরকারি পুঁজির জন্য একটি স্বীকৃত বিনিয়োগের ক্ষেত্র উন্মোচন করা।
৬. বেশি সংখ্যক নাগরিকের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৭. বিদেশি পর্যটক ও দেশীয় জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা।
৮. হস্ত ও কুটিরশিল্পের উন্নয়ন, দেশের ঐতিহ্যের লালন ও বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় সংহতি ও ঐকমত্য সুদৃঢ় করা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব : জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের বৈদেশিক মুদ্রা অজনের ক্ষেত্রে পর্যটনের ভূমিকা অনন্য। উদাহরণস্বরূপ, মেক্সিকো ও ইন্দোনেশিয়ার কথা বলা যেতে পারে। এ দুটো দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৭০% পর্যটন খাত থেকে আসে। এছাড়া মরক্কো, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কোরিয়া প্রভৃতি দেশ পর্যটনশিল্প উন্নয়নের মাধমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠমো উন্নয়নে সমর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের সমস্যাসমূহ : বহুমুখী সমস্যার আবর্তে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প সংকটাপন্ন। ১৯৯২ সালে ঘোষিত পর্যটন সম্পর্কিত জাতীয় নীতিমালারও সুচারু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের প্রধান সমস্যাগুলো নিম্নরূপ : ১. যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সমস্যা : বাংলাদেশের আকর্ষণীয় ও দশনায় স্থানগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান রছে। এ সকল স্থানে যাতায়াতের জন্য নৌ ও সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।
২. বেসরকারি উদ্যোগের অভাব : পর্যটন বেসরকারি উদ্যোগেই সব দেশে সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি যাতে পর্যটন খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ব্যাপক পুজি বিনিয়োগ করতে পারেন।
৩. অনুন্নত অভ্যন্তরীণ পর্যটন ব্যবস্থা : অভ্যন্তরীণ পর্যটন উন্নত না হলে কোনো দেশে আন্তর্জাতিক পর্যটন বিকাশ লাভ করতে পারে না। আর অভ্যন্তরীণ পর্যটন উন্নত হয় কেবল দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে পর্যটনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে।
৪. নিরুপদ্রব পরিবেশ এবং নিরাপত্তার অভাব : বাংলাদেশে পর্যটনের ক্ষেত্রে নিরুপদ্রব পরিবেশ এবং নিরাপত্তার অভাব পরিলক্ষিত হয়। পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায়, বিমানবন্দরে বিদেশিরা নানাভাবে প্রতারিত কিংবা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিমানবন্দর পেরিয়ে ট্যাক্সি বা মোটর ভাড়া করতে গিয়েও তারা প্রতারকের খপ্পরে পড়ে।
৫. আকর্ষণীয় প্রচার ও সাবলীল উপস্থাপনার অভাব : বাংলাদেশের নয়নাভিরাম অফুরন্ত প্রাকৃতিক শোভা এবং ঐতিহাসিক।
স্থাপত্যকীর্তি থাকলেও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সেগুলো আকর্ষণীয় করে প্রচার এবং উপস্থাপন করার পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই।
৬. দক্ষ গাইডের অভাব : ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসা বিদেশিদের অনেক সমস্যার মধ্যে একটি হলো ভালো গাইডের।
দুষ্প্রাপ্যতা । ভিন দেশে এসে একজন পর্যটক প্রথমেই পেতে চায় একজন ভালো গাইড, যিনি তার ভ্রমণকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবেন। কিন্তু আমাদের দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভালো ও উপযুক্ত গাইডের অপ্রতুলতা রয়েছে।
৭. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব : দেশে পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য দক্ষ ও মানসম্মত জনশক্তি অপরিহার্য। আর আধুনিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই কেবল এ ধরনের জনশক্তি গড়ে তোলা যায়।
৮. রাজনৈতিক অস্থিরতা : হরতাল, ধর্মঘট তথা রাজনৈতিক অস্থিরতা এ দেশের অন্যান্য খাতের মতো পর্যটনশিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে যখন-তখন হরতাল-ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বাড়তি ঝক্কির সম্মুখীন হয় পর্যটকরা। ফলে ভাটা পড়ে পর্যটকদের উৎসাহে, অবদমিত হয় বিদেশিদের বাংলাদেশ ভ্রমণের ইচ্ছা।
৯. পর্যটন নীতির দৈন্যদশা : বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের ক্ষেত্রে সরকারি নীতির দৈন্যদশা পরিলক্ষিত হয়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসমূহে এ খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি বিভাগ যেমন— রাস্তাঘাট, যানবাহন, প্রত্নতত্ত্ব, সংস্কৃতি, ক্রীড়া প্রভৃতির মধ্যে সমন্বিত কর্মকান্দ্রে নীতি অনুসৃত হয় না।
পর্যটন বর্ষ-২০১৬ : বাংলাদেশের পর্যটন খাত বর্তমানে শিল্পে পরিণত হয়েছে। এই শিল্পে বর্তমানে কয়েক লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। পর্যটন ব্যবসায় জড়িত রয়েছে শত শত প্রতিষ্ঠানও এজেন্সি। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনে পৃথিবীর সেরা ৫০টি স্থানের মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে ২টি। এছাড়া ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রয়েছে ৩টি। এছাড়া পাহাড়-পর্বত, নদীঝরনা, হাওর-বিল প্রভৃতি মিলিয়ে বাংলাদেশের পর্যটন খাত প্রচুর সম্ভাবনাময়। দেশের এই পর্যটন শিল্পকে আরো গতিশীল করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া দু-দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পর্যটন সম্মেলন উদ্বোধনকালে ২০১৬ সালকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করে। এরপর থেকে পর্যটন বর্ষ-২০১৬ কে কেন্দ্র করে নানা উদ্যোগ নিতে শুরু করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান। ঘোষিত হয়েছে পর্যটন বর্ষ-১৬ এর লক্ষ্যমাত্রাও। ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৮ পর্যন্ত।
লক্ষ্যমাত্রাসমূহ :
মেয়াদকাল ২০১৬-২০১৮
১০ লাখ বিদেশি পর্যটক।
৩০ কোটি মা, ডলার রাজস্ব আয়।
তিন লাখ নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
পর্যটন বর্ষের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিদায় নেয়া বছরের শেষ দিন (৩১ ডিসেম্বর ২০১৫) পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী ‘মেগা বিচ কার্নিভাল'।
এছাড়া Visit Bangladesh-2016 স্লোগান দিয়ে শুরু করতে যাওয়া পর্যটন বর্ষকে ঘিরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন আবাসিক, যাতায়াত, ভিসা সহজকরণ, খাবারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নানা সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের পর্যটন এলাকাগুলোকে নতুনরূপে। সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের জন্য করণীয় : নিম্নে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য কতিপয় সুপারিশ পেশ করা হলো :
- অবিলম্বে পর্যটন সম্পর্কিত জাতীয় নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
– দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে আধুনিকায়ন করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তা তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
- ঐতিহাসিক নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থানসমূহে যাতায়াতের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আরামদায়ক বাসস্থান ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে।
- অভ্যন্তরীণ পর্যটন ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে পর্যটন সম্পর্কে সচেতন ও আগ্রহী করে তোলা অত্যন্ত। হন। এজন্য পর্যটন বিষয়ে ব্যাপক গণশিক্ষা এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পর্যটন বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।
- দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে পর্যটন বিষয়ে আধুনিক ও মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যটন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে।
-পর্যটনদের নিরাপত্তার জন্য দেশে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলার প্রয়োজন। বিমানবন্দরে নানা উটকো ঝামেলা, ভিক্ষুকদের উৎপাত, ছিনতাই তাদি যাতে বিদেশি পর্যটকদের বিব্রত না করে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
- প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ পর্যটক গাইড গড়ে তুলতে হবে এবং দক্ষ গাইডের দুষ্প্রাপ্যতা দূর করতে হবে।
-বিমানবন্দরে পর্যটকদের জন্য আলাদা ডেস্কের ব্যবস্থা করতে হবে।
-পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের জন্য বেসরকারি উদ্যোগকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন ব প্রয়োজনবোধে রেয়াতি ঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।
-পর্যটনশিল্পের বিকাশের জন্য উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও মুক্ত মনের প্রয়োজন। |
-বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্র ও আকর্ষণীয় স্থানগুলোর ওপর ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি তৈরি করে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনসমূহের মাধ্যমে তা বহির্বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
- পর্যটন স্পটগুলোতে নিয়মিতভাবে আকর্ষণীয় খেলাধুলা, হস্তশিল্প প্রদর্শনী, মাছ, নৌকা ভ্রমণ, লোকসঙ্গীত ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
-ব্যয়বহুল ও প্রযুক্তি নির্ভর নগরভিত্তিক পর্যটনশিল্পের পরিবর্তে প্রাকৃতিক অতুলনীয় দৃশ্য এবং পুরাকীর্তিসমূহ পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
- পর্যটকদের সহায়তা দানের জন্য স্থানীয়ভাবে পর্যটন ক্লাব, প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
- সর্বোপরি দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন করতে হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে পর্যটনের আকর্ষণের অভাব নেই। একজন পর্যটক যা চায় তার। সবই আছে এ দেশে। কিন্তু অভাব আছে কার্যকর উদ্যোগের, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার।পর্যটনশিল্পে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধান করতে পারলে এবং উপযুক্ত পর্যটন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে।
Previus
Next
Share This Post